আজ রোববার বিশ্ব এইডস দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস যাবে চলে। গত এক বছরে দেশে ১ হাজার ৪৩৮ জন নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছর এইডসে মারা গেছেন ১৯৫ জন।
এ তথ্য পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি) সূত্রে। দিবসটি উপলক্ষে দেশের এইডস–সংক্রান্ত নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তথ্য বলছে, এবার বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ। এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এ রোগে এ বছর মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তবে তরুণদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। বিবাহিতদের মধ্যেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।
এ ছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং হিজড়াদের মধ্যেও সংক্রমণ কমছে না। তরুণ বয়সী এবং হিজড়া ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ঝুঁকির মধ্যে আছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এক ব্যক্তির এইচআইভি শনাক্ত হয়। এরপর প্রতিবছরই এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। দু-এক বছর এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কমে গেলেও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাই ছিল বেশি। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের বছর বাদ দিলে গত ১০ বছরে এইচআইভিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭৬। সে অনুযায়ী, চলতি বছর ১৬২ জন রোগী বেড়েছে।
বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আক্রান্ত কম হলেও ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার এ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
ওয়ার্ল্ডো মিটারসের তথ্যানুসারে, সারা বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৪ জন। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২২ সালের তথ্য মতে, দেশে অনুমিত এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫১৩ জন।
চলতি বছর নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ ভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছর। আর ২১ ভাগের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর। গত বছর এই তরুণ বা ১৯ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল ১৬ ভাগ। এ বছর মোট আক্রান্তের মধ্যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। গত বছর এ হার ছিল ১২ শতাংশ। মোট সংক্রমণের ১ শতাংশ হিজড়া। গত বছরও তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার এমনই ছিল। এই তিন গোষ্ঠীসহ সমকামী, নারী যৌনকর্মী, শিরায় মাদক সেবনকারীরাও এইচআইভির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
চলতি বছর যতজন এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই বিবাহিত। আর অবিবাহিত রয়েছেন ৪০ শতাংশ। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত রয়েছেন ৫ শতাংশ। গত বছর বিবাহিতদের মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল ৬০ শতাংশ। আর অবিবাহিতদের মধ্যে তা ছিল ৩১ শতাংশ। গত বছরের মতো এবারও ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে এইচআইভিতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি-এল অ্যান্ড এএসপির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবেই বয়সে নবীন জনগোষ্ঠী এইচআইভির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের এখানেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আর মিয়ানমারে থাকতেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। রোহিঙ্গাসহ হিজড়াদের মধ্যে আসলে আগের চেয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেড়েছে। তাই শনাক্তও হচ্ছে বেশি।’
গত বছর এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৬৬। এবার এ সংখ্যা ১৯৫। মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেলেও তা এখনো শঙ্কাজনক পর্যায়ে আছে বলেই মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম।
এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, এখন এইচআইভির চিকিৎসার ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। তারপরও এত মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। মৃত্যুর কারণ হতে পারে নিয়মিত এবং যথাযথ চিকিৎসা নিচ্ছেন না আক্রান্ত ব্যক্তিরা। আবার যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রতিরোধী হয়ে উঠছে কি না, সে বিষয়েও নজর দেয়া দরকার।
দেশের প্রায় সব জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি সংক্রমণ পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও উপজেলা হাসপাতালে তা নেই। উপজেলা পর্যায়ে এইচআইভি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭৬। সে অনুযায়ী, চলতি বছর ১৬২ জন রোগী বেড়েছে।
