
লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙা মাটির দেশে যা …….. কোলকাতার কবি অরুণ চক্রবর্তীর এই কবিতাটি মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে লোকসঙ্গীত। তুমুল জনপ্রিয় এই লোকসংগীতের স্রষ্টা এবার থেমে গেলেন। থেমে গেল তার কবিতা লেখা, সংস্কৃতি চর্চাও। পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন ৮০ বছর বয়সী এই গুণীশিল্পী।
বলছি অরুণ চক্রবর্তীর কথা। শুক্রবার মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির চুঁচুড়ার ফার্ম সাইড রোডের বাড়িতে মারা গেছেন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন পুত্রবধু সুদেষ্ণা চক্রবর্তী।
অরুণের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার বাগবাজারে। পেশায় ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করে চাকরি করতেন হিন্দুস্তান মোটর্সে। বাংলার লোকসংস্কৃতি নিয়ে চর্চা করতেন অরুণ। ঘুরতেন পাহাড়, জঙ্গল এবং আদিবাসী এলাকায়।
গানটি ১৯৭২ সালে অরুণ চক্রবর্তী রচিত শ্রীরামপুর স্টেশনে মহুয়া গাছটা কবিতার উপর ভিত্তি করে লেখা। অরুণ চক্রবর্তী ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে শ্রীরামপুর স্টেশনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মহুয়া ফুলের গাছ ও ফুল দেখে কবিতাটি রচনা করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে ভি বলসারার ব্যবস্থাপনায় সুভাষ চক্রবর্তী এটি রেকর্ড করেন। অরুণকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয় এই গান।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন অরুণ। শুক্রবার কলকাতার মোহরকুঞ্জে জঙ্গলমহল অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। সেখান থেকেই কিছুটা ঠান্ডা লেগেছিল। তার পুত্রবধূ জানিয়েছেন, করোনার পর থেকেই অরুণের ফুসফুসে সমস্যা ছিল।
সান্তাক্লজের মতো লাল পোশাক পরে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরতেন অরুণ। মাথায় বাঁধতেন রঙিন রুমাল। ঝোলায় চকলেট রাখতেন। ছোটোদের দেখলে চকলেট দিতেন।
অরুণের মরদেহ বাড়ি থেকে চুঁচুড়া রবীন্দ্র ভবনে নেওয়া হবে। গুণগ্রাহীরা সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে শ্যামবাবুর ঘাটে কবির শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তবে তার অমর লোকসঙ্গীতের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন এই কীর্তিমান।