
জলবায়ু ইস্যুতে জাতিসংঘের আলোচনার অচলাবস্থাতেই থেকে গেলো। এই পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারলেন না শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে চলমান এই জোটের শীর্ষ সম্মেলনে সোমবার এ বিষয়ে সাফল্য দেখাতে পারেনি। এছাড়ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কোনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেননি এই জোটের নেতারা।
সোমবার সম্মেলনে বিশ্বনেতারা তাদের আলোচনায় জলবায়ু সংকটকে প্রাধান্য না দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসা নিয়ে আলাপকেই বেশি গুরুত্ব দেন।
জি-২০ সম্মেলনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ বিশ্বের ধনী অর্থনীতির দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আজারবাইজানে থমকে যাওয়া জলবায়ু আলোচনায় গতি ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছিল। সেই সাথে বৈশ্বিক উষ্ণায়নজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রচেষ্টায় অর্থায়ন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছিল বিশ্ব সংস্থা।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে কারা অর্থসহায়তা দেবে, তা নিয়ে আলোচনায় বিভক্ত হয়ে পড়েন জি-২০ নেতারা। এ বিষয়ে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। বরং বলেছেন, লাখ লাখ কোটি ডলারের এ সহায়তা ‘সব উৎস থেকেই’ আসতে হবে।

ধনাঢ্য দেশগুলোর নেতাদের এমন অবস্থান প্রসঙ্গে পরামর্শক গ্রুপ গ্লোবাল সিটিজেনের সহপ্রতিষ্ঠাতা মিক শেলড্রিক বলেন, নেতারা জলবায়ু ইস্যুতে সিদ্ধান্তের বিষয়টি বাকুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। জলবায়ু বিষয়ে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের চলা আলোচনার দিকে ইঙ্গিত করে এ বক্তব্য দেন তিনি।
শেলড্রিক এএফপিকে বলেন, ‘নেতাদের এমন মনোভাব জলবায়ু ইস্যুতে কোনো সমঝোতা সম্ভবত আরও কঠিন করে তুলছে।’
ইউক্রেন যুদ্ধ আরও জোরালো হওয়ার ঝুঁকি ও ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম’ নীতির ভবিষ্যৎ, এ দুই বিষয়ই মূলত গতকাল জি-২০ নেতাদের আলোচনায় প্রাধান্য পায়। তবে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় তাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা গেছে।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও অংশ নিচ্ছেন। অংশগ্রহণকারী নেতাদের সঙ্গে আলাদা কয়েকটি আলোচনায় প্রেসিডেন্ট সি সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব একটি নতুন ‘অস্থিরতার’ যুগের মুখোমুখি। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ-সংঘাত বাড়তে দেওয়া ও উত্তেজনায় কোনো ধরনের উসকানি প্রদান করা উচিত হবে না।’
সম্মেলন শুরুর আগের দিন গত রোববার জো বাইডেন ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমোদন দেন। এ নিয়ে মস্কো ও কিয়েভের উত্তেজনা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে।
ইতিমধ্যে, গতকাল রাশিয়া হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, তার ভূখণ্ডে হামলায় মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হলে ‘যথোপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হবে।
বাইডেনের ওই পদক্ষেপকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থানে বড় পরিবর্তন বলে মনে করা হচ্ছে। এতে এ যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচনে জিতলে তিনি দ্রুত এ যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন।
এদিকে, সম্মেলনে অংশগ্রহণকালে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো পেনা। গতকাল দিন শেষে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রিও ডি জেনিরোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ব্রাজিলের কর্মকর্তারা এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্টের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর আগে অসুস্থ পেনাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সম্মেলনস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। লাতিন আমেরিকার কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পেনা বুকের ব্যথায় আক্রান্ত হন।
এক বিবৃতিতে জি-২০ নেতারা ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে ‘ব্যাপক পরিসরে’ যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার এ সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।