পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি কমলা হ্যারিস- কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? তা নিয়ে মেলানো হচ্ছে নানান সমীকরণ, চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে হঠাৎ ছিটকে পড়া এবং ট্রাম্পের ওপর বন্দুক হামলাসহ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই ঘটতে দেখা গেছে নাটকীয় নানান ঘটনা ।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের পাশাপাশি ইউক্রেন ও গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা বৈশ্বিক বিষয়গুলোও গুরুত্ব পেতে দেখা যাচ্ছে এবারের প্রচারণায়।
বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটা ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিত হলেও মার্কিন নাগরিকরা এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি আইনসভার সদস্যদেরকেও বেছে নেবেন। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে মার্কিন নাগরিকদের বাইরেও সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নজর রাখছেন।
ট্রাম্প এবং কমলা নির্বাচনের শেষ দিকের প্রচারণায় ভোটারদের নানা ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন। কমলা হ্যারিস ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, নির্বাচিত হলে প্রথম দিন থেকেই মনোযোগ দেবেন তিনি জীবনযাত্রার খরচ কমানোর দিকে। তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রথমবারের মতো বাড়ি কেনার সুবিধা, আবাসনের ব্যবস্থা ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রাকে সাশ্রয়ী করার। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী জ্বালানির দাম কমানো হবে তেল উৎপাদন বাড়িয়ে। যদিও এককভাবে প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণে নয়, তবুও তিনি সুদের হার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হ্যারিস আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে তার দীর্ঘকালীন প্রসিকিউটরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মাদক চক্র ও গ্যাং সহিংসতা দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। তিনি পুনর্গঠন করতে চান ডেমোক্র্যাটদের অধীনস্থ শহরগুলোকে। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী বা ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে ‘বিপজ্জনক শত্রুদের’ মোকাবিলারও ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারে কমলা হ্যারিস এগিয়ে রয়েছেন গর্ভপাতের অধিকারকে কেন্দ্র করে। তিনি সারা দেশে এই অধিকারকে সুরক্ষিত করার আইন প্রণয়নের পক্ষে জোর দিচ্ছেন ।
অন্যদিকে, এই বিষয়ে ট্রাম্প একক কোনো নীতিতে এগোতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাঁর নিয়োগ দেওয়া তিনজন বিচারপতি ২০২২ সালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার (‘রো বনাম ওয়েড’ রুলিং) বাতিল করার ক্ষেত্রে।
অন্যদিকে, এবারের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ব্যালট পেপারে ইংরেজির পাশাপাশি চারটি বিদেশি ভাষার অন্যতম হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাংলা। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, অন্য ভাষার সঙ্গে বাংলাও রয়েছে নিউইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে। নিউইয়র্কের ব্যালট পেপারে এশীয়-ভারতীয় ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলাই প্রথম ছাপা হলো ।
নিউইয়র্কের প্রধান শহর নিউইয়র্ক সিটিতে আয়োজিত রায়ান ব্রিফিংয়ে বলেন, অভিবাসী ভোটারদের সুবিধার জন্য বোর্ড অব ইলেকশন্স নিউইয়র্ক শাখা ব্যালট পেপারে ইংরেজির পাশাপাশি ৪টি ভাষা অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ভাষাগুলো হলো চীনা, স্প্যানিশ, কোরিয়ান ও বাংলা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যটি অধিবাসী অধ্যুষিত। নিউইয়র্ক সিটিসহ এই রাজ্যের বিভিন্ন শহরে দেশটির মোট অভিবাসীদের একটি বড় অংশ থাকেন। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, নিউইয়র্ক রাজ্যটিতে লোকজন দুই শতাধিক ভাষায় কথা বলেন। হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, তামিলসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষাও রয়েছে এসবের মধ্যে । তবে এসবের মধ্যে একমাত্র বাংলাকে ভারতীয় ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো মার্কিন নাগরিক ভোট দিতে পারবেন এই নির্বাচনে । এক্ষেত্রে আগেই ভোটার নিবন্ধন করা হয় নর্থ ডাকোটা বাদে যুক্তরাষ্ট্রের বাকি ৪৯টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয় ভোটের আগেই এবং নিবন্ধনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে।
এমনকি ভোটার নিবন্ধনে নাম লেখাতে পারেন বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরাও। এক্ষেত্রে তারা আবেদন করতে পারেন পোস্টাল ব্যালোটে বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার জন্য। কতক্ষণ ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন, সেটি অঙ্গরাজ্য গুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোটের সুযোগ দেওয়া হয়। যার ফলে নির্বাচনের দিনের আগেই তালিকাভুক্ত ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারেন।
ডাকযোগে সেখানে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা ইলেকশন ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৮ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৪ জন ভোটর আগাম ভোট দিয়েছেন। যারা নির্বাচনের দিন ভোট দিতে যাবেন, তাদের সশরীরে ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দিতে হবে।
