
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) রোগটি হলে একসময় অভিভাবকরা আশাহত হয়ে পড়তেন। সাত থেকে আটটি ডিসিপ্লিনের চিকিৎসাসেবা মিলিয়ে এই বিরল রোগের চিকিৎসা করতে হয় বলে অনেকেই দিকনির্দেশনার অভাবে হতাশ হতেন। দেশে এ রোগের চিকিৎসার তেমন সুযোগও ছিল না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন পক্ষের আন্তরিকতায় বর্তমানে দেশেই মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। খুব নিকট ভবিষ্যতে এ বিরল রোগ এসএমএ-এর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাব্যবস্থা দেশেই গড়ে উঠবে।
সোমবার আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে অনুষ্ঠিত ‘নিউরোমাস্কুলার ডিজিজ ট্রিটমেন্ট সেন্টার’ বা এসএমএ ক্লিনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলছিলেন নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালের পরিচালক প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে এখন পর্যন্ত একাধিক ওষুধ অনুমোদিন পেয়েছে। বাংলাদেশেও এরই মধ্যে রোশের মুখে পাওয়ার একটি ওষুধ (রিসডিপ্লাম) অনুমোদন পেয়েছে। ওষুধের মূল্য ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষীয় কাজ চলছে। আগামীতে ওষুধের দামও সবার সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে বলে আমরা আশা করছি।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা হতাশ হবেননা। এসএমএক হলেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। তিনি বিওবানদের এগিয়ে আসরে অনুরোধ জানান। কিউর এসএমএ বাংলাদেশকে ধন্যবাদ। তারা এগিয়ে এসেছে। যার কারনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই রোগ সর্ম্পকে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে রোশ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্ক হিব, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম, পেডিয়েট্রিক নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নারায়ন সাহা, কিউর এসএমএ বাংলাদেশের সভাপতি শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড আইএস বিভাগের অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান সরকার, এফসিএমএসহ নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, রোশ বাংলাদেশের বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কিউর এসএমএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত এসএমএ রোগী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনু্ষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম বলেন, বিশ্বের ব্যয়বহুল যেসব চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ রয়েছে, তার মধ্যে এসএসএ একটি অন্যতম রোগ। এই রোগের একটি টিকার দাম প্রায় ২২ কোটি টাকা। মুখে খাওয়ার ওষুধ দেশে অনুমোদন পেয়েছে, এর দাম তিন লাখে নেমে এসেছে। যেহেতু এটি সবসময় খেয়ে হয়, সবার পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা খুব প্রয়োজন। তবে এজন্য সারাদেশে কি পরিমান রোগী আছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান দরকার। এক্ষেত্রে সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, তবে আশার কথা হচ্ছে, চিকিৎসা সেবা এবং থেরাপির কারনে ওষুধের প্রয়োজন খুব বেশি অনুভব করছেনা। এজন্য উপযুক্ত সেবা নিশ্চিতের বিকল্প নেই। তিনি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পরে ‘নিউরোমাস্কুলার ডিজিজ ট্রিটমেন্ট সেন্টার’ বা এসএমএ ক্লিনিক পরিচালনা করা হয়। এসএমএ রোগে আক্রান্ত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনার পাশাপাশি বিনামূল্যে নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেয়া হয় এসময়।
ক্লিনিক আয়োজনে সার্বিক সহযোগীতা ছিল নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, বাংলাদেশে এসএমএ আক্রান্ত রোগীদের কল্যাণে কাজ করা রোগী এবং অভিভাবকদের একমাত্র সংগঠন ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ’ এবং সায়েন্টিফিক পার্টনার হিসেবে সহযোগীতা করেছে ১৮৯৬ সালে সুইজারল্যান্ডের বাজেল শহরে প্রতিষ্ঠিত রোশ গ্রুপের অ্যাফিলিয়েট ‘রোশ বাংলাদেশ লিমিটেড’।