মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল

ট্রেন্ডিং টপিক

ইসরায়েলে পৌঁছুলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। এয়ার ফোর্স...

পিআর পদ্ধতি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের ইস্যুটি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে...

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি, শহীদ মিনারে অবস্থান

২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাতা বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে...

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অবস্থান

‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫’ দ্রুত চূড়ান্ত করে অধ্যাদেশ জারির...

হারাতে বসেছে বাংলার মৃৎশিল্প, টিকে থাকা এখন সংগ্রামের নাম

ছবি : সংগৃহিত

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মহেশপুর। ভোরের প্রথম আলো যখন বাড়ির উঠোনে নেমে আসে, তখন গুরুচরণ পাল মাটির কাজ শুরু করেন। চাকায় বসে একে একে তৈরি করেন মাটির হাঁড়ি, সানকি, কলসি আরও কতো কি! সব কিছুই যেন তার জীবনের নিবিড়-ঘনিষ্ঠ।

“বেলা বাড়লে রোদের তাপ থাকে, কিন্তু সকালে যখন কাজ শুরু করি, তখন মাটির প্রতিটি স্পর্শ যেন নতুন কিছু বলে,” বলেন গুরুচরণ পাল। এক সময় বাপ-দাদার হাতে মাটির এই শিল্প রূপ পেতো, আজ তিনি একা। মৃৎশিল্পের অবস্থাও এখন সংকটাপন্ন।

“আগে আমাদের তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, প্রদীপ, খেলনা মানুষের ঘরে ঘরে ব্যবহার হতো। কিন্তু এখন সেগুলোর জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিস। কাজ কমে গেছে, আয়ও তেমন হয় না। তাই বাপ-দাদার এই পেশায় আমার সন্তান চেষ্টা করেও থাকতে পারেনি। সে এখন ঢাকায় গার্মেন্সে চাকুরী করে!” বলেন গুরুচরণ পাল।

ছবি : সংগৃহিত

তার বিশ্বাস, মূল্যায়ন না হলে নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আসবে না। তিনি আরো বলেন, “শুনেছি মাটির হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার করা শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু মানুষ তো কেনে না। সবার অভিযোগ মাটির জিনিস ভেঙে যায়! যদি সবাই মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার করত, আমাদের তো ব্যবসা হতো। আমরা তো টিকে থাকতে পারতাম! কেউ যদি নাই কেনে, তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচবো?”

তাহলে সংসার চলে কীভাবে? — এমন প্রশ্নে একটু থেমে, নিঃশব্দে হেসে বললেন — এখন কীর্তন গান করেন, মানুষের জমিতে বর্গা চাষ করেন। তার পাশাপাশি পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া জাতের ব্যবসাটাও কোনো রকমে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

এতে আরেক মৃৎশিল্পী পরিমল চন্দ্র পালও তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। “এখন এই পেশায় আর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। মৃৎশিল্পের সাথে কৃষি কাজ করে কোনমতে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করছি। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় আসবে কিনা, তা বলা মুশকিল,” বলেন তিনি।

কালাইয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি গবেষক আব্দুল মজিদ বলেন, “মৃৎশিল্পের দূর্দিন যাচ্ছে, কথাটা শতভাগ মেনে নিচ্ছি না। তবে আধুনিকায়ন জরুরি। উপকরণের সহজলভ্যতা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি এবং পণ্যের নান্দনিকতা আনয়নের মাধ্যমে এই শিল্প বাঁচানো সম্ভব।”

এদিকে, ‘শেকড়’ নামে একটি সামাজিক উদ্যোগ মৃৎশিল্পের পুনরুজ্জীবন করতে কাজ করছে। এর প্রতিষ্ঠাতা সাজিয়া ইসলাম পায়েল বলেন, “মৃৎশিল্প শুধু আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়, এটি হাজারো কারিগরের জীবন-জীবিকার মাধ্যম। আমরা শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের তৈরি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান বলেন, “লোকজ সংস্কৃতি রক্ষা এবং স্থানীয় শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। আমরা তাদের পাশে থাকব এবং ভবিষ্যতে মৃৎশিল্পের পণ্যগুলোর মান উন্নয়ন ও বাজারজাতের জন্য প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী বা মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।”

এদিকে গুরুচরণ পালের চোখে নীরবতা ঝরে পড়ে। তার চোখে একটা প্রশ্ন — যদি এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হয়, তবে সময়ের সাথে মিশিয়ে নতুন কিছু করা কি সম্ভব? কীভাবে আবার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে, যখন নতুন প্রজন্ম তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে?

মৃৎশিল্প কেবল একটি পেশা নয়, এটি বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। যদি এটি হারিয়ে যায়, তা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

তবে, নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে যদি এই শিল্প পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তবে গুরুচরণ পালের মতো হাজারো মৃৎশিল্পী তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবেন – এমনটাই বিশ্বাস বোদ্ধাদের।

সর্বশেষ সংবাদ

এমন আরো সংবাদ
এশিয়ান পোস্ট বিডি ডট কম

মঙ্গলবার নতুন কুঁড়ির চূড়ান্ত পর্বের বাছাই শুরু

বিটিভিতে শিশু কিশোরদের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’র চূড়ান্ত পর্যায়ের...

ইসরায়েলে পৌঁছুলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। এয়ার ফোর্স...

১৬ অক্টোবর এইচএসসি’র ফল প্রকাশ

আগামী ১৬ অক্টোবর প্রকাশিত হবে চলতি বছরের এইচএসসি ও...

পিআর পদ্ধতি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের ইস্যুটি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে...