
গত নভেম্বরে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মুখোমুখি দেখায় নিউক্যাসলের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল আর্সেনাল। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইংলিশ লিগ কাপের সেমিফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচটা আর্সেনালের কাছে এক অর্থে ছিল প্রতিশোধের। কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়া দূরের কথা, ঘরের মাঠ এমিরেটসে উল্টো ২-০ ব্যবধানে হেরে বসেছে মিকেল আর্তেতার দল।
আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সেন্ট জেমস পার্কে ফিরতি লেগে মুখোমুখি হবে দুদল। সে ম্যাচে আর্সেনাল হারলে কিংবা দুই গোলের কম ব্যবধানে জিতলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে। আর সেটা হলে সর্বশেষ তিন মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো এ টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠবে নিউক্যাসল।

উল্টোদিকে আর্সেনাল? তাদের শিরোপার সঙ্গে দূরত্ব যেন ঘুচছেই না! আর্সেনালের কোচ হিসেবে মিকেল আর্তেতা দায়িত্ব নিয়েছেন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। গানারদের দায়িত্ব নিয়ে গেল পাঁচ বছরে দলবদলের বাজারে একের পর এক খেলোয়াড় কিনেছেন। সংখ্যাটা নির্দিষ্ট করে বললে, আর্তেতা দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্সেনাল মোট ৩৪ জন খেলোয়াড় কিনেছে। এর মধ্যে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে দলে যোগ দিয়েছেন মোটে ৬ জন। বাকি ২৮ জনকে কিনতে আর্সেনালকে খরচ করতে হয়েছে ৭৯ কোটি ১৮ লাখ ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

কিন্তু দেদারসে অর্থ ঢেলেও বলার মতো সাফল্য পায়নি আর্সেনাল। গত পাঁচ বছরে ক্লাবটির অর্জনের থালায় যুক্ত হয়েছে শুধু একটি এফএ কাপ (২০১৯-২০) ও দুটি কমিউনিটি শিল্ডের (২০২০ ও ২০২৩) শিরোপা। চলতি মৌসুমে লিগে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ১ ম্যাচ বেশি খেলেও ৬ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে।
এবারও লিগ শিরোপার স্বপ্ন তাই আর্সেনালের জন্য দুস্তর পারাবার। চ্যাম্পিয়নস লিগে তো এখনো গ্রুপ পর্বই শেষ হয়নি, কখনো সে শিরোপা না জেতা আর্সেনাল সেখানে রেয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যান সিটি, লিভারপুলের মতো ক্লাবগুলোর বিপক্ষে কতটা দূর পর্যন্ত যেতে পারে, তা দেখার ব্যাপার। তুলনামূলক লিগ কাপের শিরোপা জেতার পথটা সহজ ছিল আর্সেনালের। কিন্তু সে পথটাও গতকাল কঠিন হয়ে পড়ল গানারদের জন্য।

অবশ্য গতকাল আর্সেনাল যে খারাপ খেলেছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই। ম্যাচের ৭০ শতাংশ বলের দখল তো ছিলই। সেই সঙ্গে ২৩টি শট নিয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি-কাই হাভার্টসরা। তবে ভাগ্যদেবী পাশে ছিল না আর্সেনালের। মার্তিনেল্লির একটা শট পোস্টে লেগেছে। ইউরিয়েন টিম্বার-উইলিয়াম সালিবারা গোলের সহজ সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। এছাড়া হাভার্টসের একটি হেডও বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
অন্যদিকে ৭ শট নিয়েই দুবার জালের দেখা খুঁজে পেয়েছে নিউক্যাসল। ম্যাচের ২৩ মিনিট আলেক্সজান্ডার ইসাকের গোলের পর ৫১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন অ্যান্থনি গর্ডন। শেষ পর্যন্ত এ দুই গোলই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।
ম্যাচ শেষে পরাজয়ের কারণ বলতে গিয়ে বলকে দায়ী করেছেন আর্তেতা। আর্সেনাল কোচের ভাষায়, বাতাসে বল তুলনামূলক বেশি ভাসছিল, সে কারণে মানিয়ে নিতে পারেনি তাঁর শিষ্যরা।

আর্তেতা বলেছেন, ‘আমরা অনেকগুলো শট বারের ওপর দিয়ে গেছে। এ বল দিয়ে খেলা কঠিন ছিল। বল বাতাসে বেশি ভাসছিল। পরের ম্যাচে আমরা কীভাবে ভালো করতে পরি, সেটার ধারণা পেয়েছি।’
প্রিমিয়ার লিগে সাধারণত পুমার বল দিয়ে খেলা হয়। লিগ কাপের বলের সঙ্গে সে বলের পার্থক্য আছে বলে জানিয়েছেন আর্তেতা। আর্সেনাল কোচের ভাষ্য, ‘এটা একটু অন্যরকম। প্রিমিয়ার লিগে আমরা যে বল দিয়ে খেলি, সেটার সঙ্গে এটার অনেক পার্থক্য আছে। এটা যেহেতু বাতাসে একটু বেশি ভাসে, তাই মানিয়ে নেওয়ার একটা বিষয় আছে। বলটা স্পর্শ করলেই বোঝা যায়, গ্রিপটাও অন্যরকম। এটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে।’
প্রথম লেগ হারলেও এখনো ফাইনালে ওঠার সুযোগ আছে আর্সেনালের। সে কারণে এ লেগকে ম্যাচের হাফটাইম হিসেবে উল্লেখ করেছেন আর্তেতা, ‘এটা মোটে হাফটাইম। আমি বলব যে, আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে, আমরা সেখানে (ফাইনালে) থাকব।’