
পশ্চিম কাজাখস্তানে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে দেশটিতে। বড়দিনে ৬৭জন আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। আজারবাইজান এয়ারলাইন্স জানায়, আরোহীদের মধ্যে ৬২ জন যাত্রী ও পাঁচজন ক্রু সদস্য ছিলেন। এরমধ্যে ৩৮ জন নিহত হন। বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলহাম আলিয়েভ বৃহস্পতিবারকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি রাশিয়ায় কমনওয়েলথ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটসের (সিআইএস) একটি অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন।
আলিয়েভের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট এই বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে শিগগির ও জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশ দিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যারা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমি শোক জানাচ্ছি। আশা করছি আহতরা দ্রুত সেরে উঠবেন।’

আজারবাইজান এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তাদের এমব্রায়ার ১৯০ মডেলের উড়োজাহাজটি রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে যাওয়ার উদ্দেশে বাকু থেকে রওনা হয়েছিল। কিন্তু গতিপথ বদলে কাস্পিয়ান সাগরের ওপর দিয়ে উড়ে যায় এটি। পরবর্তীতে কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি।
এ ঘটনায় কাজাখস্তানের প্রধানমন্ত্রী কানাত বোজামবায়েভ রুশ ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ এজেন্সিকে ৩৮ আরোহী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে কাজাখ জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিন শিশুসহ ২৯ আরোহী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ফ্লাইট রাডার ওয়েবসাইট দেখিয়েছে, উড়োজাহাজটি স্বাভাবিক গতিপথ থেকে সরে কাস্পিয়ান সাগরের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। তারপর এটি আকতাউর কাছে একটি জায়গায় চক্রাকারে উড়ছিল। এরপর এটি সেখানেই বিধ্বস্ত হয়। আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা আজারটেক জানিয়েছে, উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে।
কাজাখ পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও রাশিয়ার যথাক্রমে ৩৭, ৬, ৩ ও ১৬ জন নাগরিক ছিলেন।

কাজাখ জরুরি পরিস্থিতি সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পর ছড়িয়া পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ঘটনাস্থলে ১৫০ কর্মী রয়েছে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়। কাজাখস্তান জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আজারবাইজান এয়ারলাইন্স শুরুতে দাবি করেছিল এক ঝাঁক পাখির ভেতর দিয়ে উড়ে যাওয়ার পর উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। পরবর্তীতে এই বক্তব্য তারা প্রত্যাহার করে।
আজারবাইজানের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, ‘আমরা এখন তদন্তের গতিধারা সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারছি না।’
আহতদের চিকিৎসার জন্য কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানা থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের উড়োজাহাজে করে জরুরি ভিত্তিতে আকতাউ পাঠানো হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ টেলিগ্রামের বার্তায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন।