বাংলা একাডেমিতে কবি হেলাল হাফিজের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় সেখানে জানাজা হয়। এরপর বাদ জোহর জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। তার আগে কবির মরদেহ গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন কবির বড়ভাই দুলাল এ হাফিজ।
বাংলা একাডেমি কবির দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মীরা তাঁকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। জানাজা শেষে তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্খীরা তার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
সেখানে জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মাত্র একটি কবিতার বই লিখে একটি জাতির শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাসে আর কোনও কবি এতো প্রভাব রাখতে পেরেছেন কিনা আমার জানা নেই। তিনি খুব বেশি কবিতা লেখেননি। খুব বেশি বইও বের হয়নি তবুও তারুণ্য ও যৌবনের গান বললেই হেলাল হাফিজের নাম মনে পড়ে। এটা তাঁর অর্জন। বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগত তাঁর শূন্যতাবোধ করবে।’
শেষ জীবনে কবি হেলাল হাফিজ নিসঙ্গতা, একাকিত্বে জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে কী উদ্যোগ নেবে? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, কবি বেঁচে থাকেন তার কবিতায়। হেলাল হাফিজ তার কবিতাতেই বেঁচে থাকবেন। তিনি একাকী জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন। আমি জানি না তাঁর এই জীবন নিয়ে আক্ষেপ ছিল কি না। তবুও কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কী কী করা যায় তা নিয়ে কাজ করবে। আমি নিশ্চিত দ্রুতই কিছু একটা জানানো হবে মন্ত্রণালয় থেকে।
শুক্রবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও তাঁর অগণিত ভক্তরা।
প্রতিভাবান কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায়। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত বইটির মুদ্রণ হয়েছে ৩৩ বারেরও বেশি। লেখালেখির পাশাপাশি হেলাল হাফিজ দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশের পর জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন কবি।
দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সময় হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ উচ্চারিত হয় মিছিলে, স্লোগানে, কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে। ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।