২০২১ সালে ঢাকার সাভারে মাহমুদুর রহমান নামে একজনের মরদেহ দাফন করা হয়েছিল। দাফন করা সেই মরদেহ ছিল বিএনপির সাবেক প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরীর। মরদেহের ডিএনএ মিলেছে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর ডিএন‘র সাথে। এমন প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর হারিছ চৌধুরীকে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী স্থানে দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ-সংক্রান্ত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। হারিছ চৌধুরী বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন।
এর আগে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। সাভারের একটি মাদ্রাসার কবরে ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে সমাহিত হারিছ চৌধুরীর লাশ (দেহাবশেষ) তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হারিছ চৌধুরীর প্রকৃত পরিচয় শনাক্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচালককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশ অনুসারে, সাভারে ২০২১ সালে ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে দাফন করা লাশটি (দেহাবশেষ) গত ১৬ অক্টোবর কবর থেকে তোলা হয়। দেহাবশেষ উত্তোলন করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা। হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে ইতিবাচক ফল আসে, যার মধ্য দিয়ে হারিছ চৌধুরীর প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হয়।
রিট আবেদনে প্রার্থনা ছিল, সাভারের মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ যা আছে, তা তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করে তার প্রকৃত পরিচয় নির্ধারণ। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানসহ নিজ বাড়িতে দাফন করা।
আগের ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদালতে ওঠে। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইছা।
পরে আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী বলেন, হারিছ চৌধুরীর মেয়ের সঙ্গে ডিএনএ মিলেছে। অর্থাৎ, মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী। দেহাবশেষ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মান দিয়ে তাঁকে তাঁর পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইছা বলেন, ডিএনএ মিলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশ দিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মান দিয়ে দাফন করার আদেশ দিয়েছেন।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর ভাষ্য, তৎকালীন সরকারের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য হারিছ চৌধুরী আত্মগোপনে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে ঢাকা শহরেই ছিলেন তিনি। আমৃত্যু ঢাকা শহরেই ছিলেন।
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপে তার মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার অদূরে সাভারের একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাকে কবর দেয়া হয়।