
বৈভব সূর্যবংশীর স্বপ্নের সবটুকু ছিল ক্রিকেট নিয়ে। ছেলের ক্রিকেট শেখার খরচ মেটাতে কৃষক বাবা সঞ্জীব তার জমিও বিক্রি করে দেন। ওদের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরে। কাছাকাছি ছিলনা ক্রিকেট একাডেমি। তাই বলে কি ছেলের ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে পারেন বাবা! ভোর ৪টায় উঠে ১০০ কিলোমিটার দূরে বাবা-ছেলে অনুশীলনে যেতেন। তারও আগে মা বানিয়ে দিয়েছেন খাবার। এমন বাবা মায়ের সন্তান বৈভব ১৩ বছরেই পেয়েছিল সেঞ্চুরিম্যানের খ্যাতি।
আইপিএল নিলামে বৈভবের ওপর নজর ছিল অনেকের। ৩০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যের তালিকায় থাকলেও নিলামের ভাঙা হাটে রাজস্থান রয়্যালস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে লড়াই জমে উঠে তাকে নিয়েই। শেষ পর্যন্ত ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে রাজস্থান তাকে ঘরের ছেলে বানিয়ে ফেলেছে।
আইপিএল নিলামে সবচেয়ে কম বয়সীর রেকর্ডও এখন বৈভবের। আবার দল পাওয়াদের মাঝেও সবচেয়ে কম বয়সী। তবে তার জন্য কোটি রুপি এমনই লগ্নি করেনি রাজস্থান। বয়স ভিত্তিতে ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে তার। ১৩ বছরেই অনূর্ধ্ব-১৯ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিল। নিলামের আগে রাজস্থান তার জন্য ট্রায়ালের ব্যবস্থা করে। সেখানেও বাজিমাত বৈভবের। কোচ তাকে এক ওভারে ১৭ রান নিতে বলার পর সে তিনটি ছক্কা মেরে প্রমাণ দিয়েছে। ওই ট্রায়ালে আট ছক্কা ও চারটি চার মারা এই প্রতিভাকে হাতছাড়া করে কী করে রাজস্থান?
বৈভবের ক্রিকেট হাতেখড়ি কোচ সৌরভ কুমার ও মণীষ ওঝার হাতে। বিফলে যায়নি তাদের শ্রম। কোচ সৌরভ বলেন, ‘নিলামের আগে প্রতিটি দল বৈভবের খেলার ভিডিও চেয়েছিল। কোচের বিশ্বাস ছিল- ট্রায়ালের পর রাজস্থান তার জন্য ঝাঁপ দেবে।’ আরেক কোচ মণীষ জানান, বাড়ি দূরে হওয়ায় একদিন পরপর অনুশীলনে আসতো বৈভব। অন্যরা ১০০-২০০ বল খেললেও বৈভব খেলতো ৫০০ বল।
বৈভবের আইপিএলে ম্যাচ খেলার সুযোগ খুব একটা মিলবে বলে মনে হয় না। তবে শেখার দরজা খোলা থাকবে। ভারতের টি২০ বিশ্বকাপজয়ী কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন, রাজস্থানের ট্রায়ালে সে যা দেখিয়েছে তাতে বলা যায়, সে দারুণ প্রতিভা। এত কম বয়সে রাহুল দ্রাবিড়ের সান্নিধ্য পাওয়াই তো তার জন্য বিরাট ব্যাপার।
তবে এই তরুণের পিছু লেগে আছে বয়স বিতর্ক। কাগজে-কলমে বয়স ১৪ ছুঁইছুঁই হলেও আসলে তার বয়স নাকি ১৫। বিতর্ক কাটাতে বৈভবের বাবা নতুন করে পরীক্ষার পক্ষে। এমন ছেলের বাবা সঞ্জীবের মুখটা একবার কল্পনা করুনতো… অনেক বিত্ত হয়তো নেই, তবে এই বাবার তো গর্ব করার মতো একটা বৈভব আছে…