
ঠিক চার বছর আগে আজকের দিনে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায় ঢল নেমেছিল অশ্রুসিক্ত মানুষের। এদিন ফুটবল ঈশ্বরকে হারিয়ে যেন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন দেশটির মানুষ। শুধু আর্জেন্টিনার মানুষ বললে ভুল হবে, সেদিনের শোক ছুঁয়ে গেছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা ফুটবলপ্রেমিদের।
২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর আর্জেন্টাইন ফুটবলের কিংবদন্তি, ডিয়েগো ম্যারাডোনা পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েন্স আয়ার্সের উপকণ্ঠে ভিলা ফিয়োরিতোতে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম ম্যারাডোনার। পুরো নাম দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল তাঁর। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি ‘লস সেবোলিতাস’ নামে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দলে যোগ দেন। ১৫ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে আত্মপ্রকাশ এবং ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি দ্রুত ফুটবল দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করেন দিয়াগো।

আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক, যিনি আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া, এবং নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন, তার অবদান ভুলে যাওয়া অসম্ভব। তার খেলার জাদু ও ব্যক্তিত্ব আজও তাকে ফুটবলের আইকন করে রেখেছে।
ম্যারাডোনার ফুটবল ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত ছিল ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে তিনি দলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন। সেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের দুটি গোল আজও ইতিহাসের অংশ: ‘হ্যান্ড অব গড’ এবং ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি।’

ক্লাব পর্যায়ে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময় ছিল ইতালির নাপোলিতে, যেখানে তিনি ১৯৮৭ ও ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো সিরি এ লিগ জিতিয়েছিলেন তার দলকে। ক্যারিয়ারজুড়ে ছিল বিতর্ক, তবুও জনপ্রিয়তায় কমতিক ছিলনা।
২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে মারা যান ম্যারাডোনা। চার বছর পরেও, ম্যারাডোনার মৃত্যুর কারণ নিয়ে তদন্ত চলছে। তার সেবায় নিযুক্ত নার্স জিসেলা দাহিয়ানা মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত হত্যার’ অভিযোগে বিচার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।

এই মাসের ২৯ তারিখে বিচারক মারিয়া কোয়েলো নতুন শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এদিকে, ২০২৫ সালের ১১ মার্চ থেকে অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে। এর মধ্যে রয়েছেন নিউরোসার্জন লিওপোল্ড লুক, মনোবিজ্ঞানী অগাস্টিনা কোসাচভ, নার্স রিকার্ডো আলমিরনসহ আরও অনেকে।