
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ এবং তার নিয়োগ দেয়া নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাতিল চেয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানানো হয়।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ব্যতিরেকেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, ‘অতি দ্রুত গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি চুন্নুকে অপসারণ করতে হবে, ২০২২ সালের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন বাতিল করতে হবে। ওই আইনের অধীনে গঠিত নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে পাওয়া প্রস্তাবের আলোকে নতুন আইনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’
লিখিত বক্তব্যে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিবাদী কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে জনগণকে জিম্মি করেছিল, তার মধ্যে নির্বাচন কমিশন একটি। ফ্যাসিবাদ কায়েমের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ২০২২ সালে নির্বাচন কমিশন গঠন করে এবং বেছে বেছে সুকৌশলে নিজেদের লোক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা রেখে আইন প্রণয়ন করে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণকে জিম্মি করে নামকাওয়াস্তে ডামি নির্বাচন দেয়। তারা জনগণের প্রায় সবরকম মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। ব্যালট বক্স ডাকাতি, বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হত্যা, গুম, অপহরণ এবং ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়িয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে। এই পুরো প্রক্রিয়ার অন্যতম হাতিয়ার ছিল ২০২২ সালে প্রণীত নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন। এ আইনসহ অন্য নির্যাতনমূলক আইনের ওপর দাঁড়িয়ে বিগত গণহত্যাকারী সরকার আয়নাঘর, হত্যা ও গুমের মতো নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। সেই কালা কানুনের অধীনে ইসি গঠন করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে কলঙ্কিত করেছে। ‘
এসময় এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়েছে। এ কাজ গণঅভ্যুত্থানের কমিটমেন্টের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র ও জনগণ গণঅভ্যুত্থানের শরিক। কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে ড. মুহম্মদ ইউনূস এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস ও অন্য উপদেষ্টাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। ড. ইউনূস দৃঢ়তার সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেবেন– এটাই শিক্ষার্থী, তরুণ সমাজ ও অভ্যুত্থানের শরিকরা প্রত্যাশা করেন। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের বার্তা বুঝতে পারেন এবং তাদের আহ্বানে সাড়া দেবেন।’
তিনি বলেন,‘ড. ইউনূসকে মনে রাখতে হবে, তিনি ছাত্র-জনতার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত। তরুণ শিক্ষার্থী সমাজসহ আপামর জনগণের কাছেই তিনি দায়বদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে সংস্কার হবে না, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য আমরা তার কাছ থেকে শুনতে চাই না।’
এখনো সরকারের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে সামান্তা শারমিন বলেন, এ সরকার জনগণের অভিপ্রায়কে প্রতিনিধিত্ব করবে তথা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করার দিকে অগ্রসর হবে না– এটাই আমাদের দাবি।
সামান্তা আরও বলেন, ড. ইউনূস ও তার সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদী ও অবৈধ সংবিধানের আইনি কাঠামোয় নির্বাচন দিতে এত শহীদ প্রাণ দেননি। তাছাড়া গণঅভ্যুত্থানের দাবি কেবল নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা বিলোপের লক্ষ্যে সব ধরনের সংস্কার-পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে অভ্যুত্থানের লক্ষ্য অর্জিত হবে না এবং তা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানির শামিল হবে বলেও জানান কমিটির এই মুখপাত্র।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সদস্য আকরাম হোসেন, মশিউর রহমান ও আবু রায়হান খান প্রমুখ।