জুনিয়র কিংবা সিনিয়র–হকিতে অতীতে কখনো বিশ্বকাপে খেলেনি বাংলাদেশ। তবে অনূর্ধ্ব-২১ পুরুষ এবং নারী দল এবার তেমন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওমানে বসতে যাচ্ছে জুনিয়র এশিয়া কাপ হকি। এটি মূলত বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। এই আসরে ছেলেদের বিভাগে সেরা ছয়টি এবং নারী বিভাগে সেরা পাঁচটি দল কোয়ালিফাই করবে ২০২৫ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জুনিয়র বিশ্বকাপ হকিতে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেমে আসে স্থবিরতা। দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় খেলা হকি বরাবরই মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়ে থাকে আলোচনায়। আগের কমিটির কর্তারা আত্মগোপনে চলে গেলেও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান নিজ উদ্যোগে পুরুষ ও নারী দলকে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিংয়ের মধ্যে রাখেন। বিদেশি কোনো দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারলেও স্থানীয় কয়েকটি দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলা দুটি দলই জুনিয়র এশিয়া কাপে ভালো করে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছে।
২৬ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর ওমানের মাসকাটে অনুষ্ঠিত হবে ছেলেদের জুনিয়র এশিয়া কাপ। ২৩ নভেম্বর ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ দল। এই আসরে পুল ‘বি’তে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ চীন, মালয়েশিয়া, ওমান এবং পাকিস্তান। চীন এবং ওমানকে হারানোর অভিজ্ঞতা থাকা মওদুদুর রহমান শুভর দলের বড় চ্যালেঞ্জ পাকিস্তান এবং মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলবে ২৬ নভেম্বর স্বাগতিক ওমানের বিপক্ষে।
গতকাল বিমানবাহিনীর ফ্যালকন হলে জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্যের কথা শুনিয়েছেন তিনি, ‘আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমাদের প্রস্তুতি ভালো। বিকেএসপিতে ট্রেনিং করেছি। আশা করি, ভালো রেজাল্ট এনে দিতে পারব।’
অধিনায়ক মেহেরাব হাসান সামিনও দেশকে প্রথমবার বিশ্বমঞ্চে দেখতে চান, ‘আমরা চেষ্টা করব সেমিফাইনাল পর্যন্ত ফাইট করতে। শেষ চারে যদি যেতে পারি, তাহলে আগেই আমাদের বিশ্বকাপ নিশ্চিত হবে।’
তবে অনূর্ধ্ব-২১ নারী দলের জন্য পথটা আরেকটু কঠিন। ১০ দলের মধ্যে সেরা পাঁচের মধ্যে থাকতে পারলেই মিলবে জুনিয়র বিশ্বকাপের টিকিট। পুল ‘এ’তে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ চীন, ভারত, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দল। ৭ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিযোগিতা চলবে। উদ্বোধনী দিনই মেয়েরা খেলবে চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে। বাংলাদেশ জুনিয়র নারী দল ঢাকা ছাড়বে ৩ ডিসেম্বর। তারাও বিকেএসপিতে তিন মাস ট্রেনিং করেছে।
প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার ঘাটতি থাকলেও মেয়েদের নিয়ে আশাবাদী কোচ জাহিদ হোসেন রাজু, ‘আমাদের বেশির ভাগ প্লেয়ারই বিকেএসপির। একসঙ্গে অনেক দিন প্রস্তুতিতে আছে। তিন মাসের ট্রেনিংয়ে অনেক উন্নিত হয়েছে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ দল ভালো করবে। বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন আমাদেরও আছে। আমাদের মেয়েদের মধ্যে আছে।’ তিন মাসের মতো একসঙ্গে থাকায় দলের সবার মধ্যে ভালো বোঝাপড়া হয়েছে। যে কারণে ভালো ফলের প্রত্যাশা করছেন অধিনায়ক অর্পিতা পাল, ‘তিন মাস একসঙ্গে থাকার পর টিমটা ভালো। যেহেতু আমরা এশিয়া কাপে একটা ভালো রেজাল্ট করে আসছি, তাতে অবশ্যই আমাদের বিশ্বকাপের টিকিট কাটতে হবে। আমরা খুবই আশাবাদী।’
তবে খেলোয়াড়দের প্রত্যাশার চাপ নিতে মানা করেছেন হকি ফেডারেশনের সভাপতি এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। পুরুষ এবং নারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, তোমরা ভালো করবে। জিতলে ভালো, তবে হারলেও সমস্যা নেই। ভবিষ্যতে হবে। কিন্তু শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তোমাদের জন্য শুভকামনা।’