
নওগাঁয় উৎসবমুখর পরিবেশে নবান্ন উৎসব পালন করা হয়েছে। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ উপলক্ষ্যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন ধান উঠলেই নওগাঁর বিভিন্ন অঞ্চলে উদযাপন হয় এই নবান্ন উৎসব। নতুন আমণ ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত হওয়া চালের প্রথম রান্না করা খাবার দিয়ে এই উৎসবে আপ্যায়ন করা হয়।
দেড়শ বছরের বেশি সময় ধরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের পদ্মপুকুর স্কুল মাঠে আয়োজন হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা। প্রতিবছরের কার্তিক সংক্রান্তিতে বসে এই মেলা। এ মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানীরা মন্ডা-মিঠাই, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরি নকশি তৈজসপত্র, মাটির ব্যাংক, পুতুল, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, খেলনাসহ হরেক রকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন।

চন্দনা রানী পাল নামের এক নারী দোকানি জানান, অনেক বছর ধরে এই পদ্মপুকুর নবান্নের মেলাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করে আসছি। আগে আমার বাবা দাদু ও পূর্ব পুরুষরা মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিলসহ নানা রকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করতেন।
মেলার এক পাশে চলে ‘বউ মেলা’। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকানগুলোতে ভীড় করেন বিভিন্ন বয়সী নারী। মেলা দেখতে আসা কিশোরী স্মৃতি রানী বলেন, মেলায় এসে তার অনেক ভাল লাগছে। সে কিছু কসমেটিকস ও ফুলের মালা কিনেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আপেল মাহমুদ বলেন, খুব ছোট বেলা থেকে এ মেলা দেখে আসছি।
মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী মনোজ কুমার জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। মূলত নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা এই মেলার আয়োজন করে থাকি। এদিন হিন্দু সম্প্রদায় সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে কালি পূজা অর্চনা করেন এখানে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আসেন এ মেলায়।
নবান্নকে ঘিরে গ্রামীণ মানুষের মধ্য এক অন্যরকম উৎসবের আমেজ থাকে। বাড়িতে বাড়িতে শীতের পিঠা পুলি, নতুন চালের পায়েশ, ক্ষীর, ক্ষিরসা রান্না করা হয়। কৃষক পরিবারের প্রয়োজনীয় ধানচালা কুলা, চালুনি, ডালা ইত্যাদি ক্রয় করেন গৃহবধূ ও গৃহিণীরা। এই সময়ে গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয় স্বজনরা আসে, চলে খাওয়া দাওয়ার ধুম।