রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজশাহীর মতিহার থানায় নিহতের ভাই মো. বেহেস্তী মামলা দায়ের করেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। মামলায় অজ্ঞাত ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রাজশাহী মেট্রপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (৩২) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের স্টোর কিপার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবিলী অফিসার্স কোয়ার্টারে সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কোয়ার্টার থেকে নবজাতক সন্তান ও অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধ নেওয়ার জন্য বিনোদপুর বাজারে যান। এ সময় অজ্ঞাতনামা কে বা কারা তাকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অনুসরণ করেন। তারা মাসুদকে মতিহার থানাধীন অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে উপর্যুপরি প্রহার করে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে মতিহার এবং পরে বোয়ালিয়া থানায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য নিয়ে যায়।
এজাহারে বলা হয়েছে, চিকিৎসার সুযোগ না আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে বোয়ালিয়া মডেল থানায় গ্রেপ্তার দেখানোর কারণে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা থানা ঘেরাও করে এবং ওসির সঙ্গে বাক-বিতণ্ডাতায় জড়ায়। পরবর্তীতে শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদের দ্রুত এক্সরে করে এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাসুদ মারা যান।
রাজশাহী মেট্রপিলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, মাসুদের ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলাটি মতিহার থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মাসুদ ২০১৪ সালেই ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হন। সেদিন তার একটি পা গোঁড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হাতের রগও কেটে দেওয়া হয়। ওই হামলার পর একটি কৃত্রিম পা নিয়ে চলাচল করতেন মাসুদ। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন। ২০২২ সালের শেষের দিকে মাসুদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লেখেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়।
চাকরি পেয়ে বিয়ে করেন মাসুদ। গত ৩ সেপ্টেম্বর পঙ্গু মাসুদ কন্যা সন্তানের জন্য ওষুধ আনতে বাজারে যান। সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নির্যাতন করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।