
আফগানদের সাথে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ হেরে গেছে ২-১ ব্যবধানে। সোমবার ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের রান তোলার গতি ছিল কিছুটা ধীর। শেষ পর্যন্ত সেটিই কাল হলো তাদের। যদিও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেঞ্চুরির কাছে গিয়েছিলেন, তারপরও দলের রান আড়াইশও ছুঁতে পারেনি। পরে রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরির পর আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের দারুণ এক ইনিংসে ম্যাচটা নিজেদের করে নিয়েছে আফগানিস্তানরা।
সোমবার শারজাহতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে হেরেছে আফগানরদের কাছে। টস জিতে শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান করে টাইগাররা। সেই রান তাড়া করতে নেমে ১০ বল থাকতেই জয় পায় আফগানরা। প্রথম ও শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজটাও পকেটে পুরেছে আফগান দল।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে উদ্বোধনী জুটিতে সৌম্য সরকার ও তানজিদ হাসান তামিম ৫৩ রান এনে দেন। অবশ্য পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই ফিরে যান দুজন। ২৩ বলে ২৪ রান করার পর সৌম্য বোল্ড হয়ে যান আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে।
পরের ওভারে তানজিদ হাসান ক্যাচ দেন হাশমাতুল্লাহ শহীদির হাতে। তিনি ১৯ রান করে আউট হন। ৫ রান ও ১২ বলের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারায় তাদের তিন উইকেট। যার শেষজন ছিলেন জাকির হাসান। তিনি হয়েছেন রান আউট।

ওমরজাইয়ের ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বল মিরাজপয়েন্টে পাঠান। তিনি সিঙ্গেল নিতে ঝুঁকতেই জাকির দৌড়ে পিচের অর্ধেক চলে আসেন। মিরাজ না করার পর তিনি ফেরার আগেই সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙেন আফগান খেলোয়ার খারোতে।
এরপর তাওহীদ হৃদয় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের সঙ্গী হন। কিন্তু তিনি সাজঘরে ফেরেন রশিদ খানের বলে স্লিপে দাঁড়ানো গুলবাদিন নাইবের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৭ বল খেলে ৭ রান করে আউট হন হৃদয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে চার উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল।
ওখান থেকেই মিরাজ অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন। যদিও কিছুটা ধীর ছিল তাদের পথচলা । এক পর্যায়ে একটা বাউন্ডারির জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৫০ বলের বেশি।
তবে শেষদিকে এসে তারা কিছুটা হাত খোলার চেষ্টা করেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৬৩ বলে নিজের ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। তিনি ১৪ ইনিংস পর এই মাইলফলকে পৌঁছান ।
অপরদিকে মেহেদী হাসান মিরাজও তার নেতৃত্বের প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি পান। বাংলাদেশের পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে ও তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি পান শততম ম্যাচে। তার ৫০ রান করতে লাগে ১০৬ বল।
৪৬তম ওভারে গিয়ে রিয়াদ-মিরাজ তাদের লম্বা জুটি ভাঙে। মিড অফে ওমরজাইয়ের বলে নাইবের হাতে ক্যাচ দেন মিরাজ। তিনি ১১৯ বলের ইনিংসে ৪টি চার হাঁকিয়ে ৬৬ রান করেন। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটি ছিল ১৮৮ বলে ১৪৫ রানের।
তার বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাঁধে আসে বাকি ভার। শেষ ওভারে আর মাত্র চার রান করতে পারলেই সেঞ্চুরি পূর্ণ হতো তার। কিন্তু রিয়াদ তিনবার স্ট্রাইক পেয়েও দুই রানের বেশি করতে পারেননি। শেষ বলে তিনি হয়ে যান রান আউটও। আজমতউল্লাহ ওমরজাই আফগানিস্তানের পক্ষে চার উইকেট নেন।
অভিষিক্ত নাহিদ রানা রান তাড়ায় নামা আফগানদের প্রথম ধাক্কা দেন। চতুর্থ ওভারের সময় একটি মেডেন পেয়েছিলেন তিনি, চার ওভার পর পান ক্যারিয়ার ও ইনিংসের প্রথম উইকেট। তার গতিতে সাদিকুল্লাহ আতাল পরাস্ত হয়ে ঠিকঠাক ব্যাটই নামাতে পারেননি। তিনি ১৮ বলে ১৪ রান করে আউট হন।
১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান করে আফগানিস্তান। এরপর মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন। ২১ বলে ৮ রান করে মোস্তাফিজের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন রহমত শাহ। অবশ্য আরেকদিকে চালিয়েই খেলছিলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ।
রিশাদ হোসেন মোস্তাফিজের বলে তার ক্যাচ ছেড়েছিলেন। ওই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শুরুতে হাফ সেঞ্চুরি করেন গুরবাজ। এর আগেই অবশ্য হাশমাতুল্লাহ শহিদীকে সাজঘরে পাঠায় বাংলাদেশ। কিন্তু চতুর্থ উইকেট জুটিতে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে সঙ্গে নিয়ে গুরবাজএকশ রানের জুটি গড়ে ফেলেন।
গুরবাজের সেঞ্চুরি পর তাদের এই জুটি ভাঙে। তিনি ১২০ বলে ১০১ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে জাকির হাসানকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন । কিন্তু আজমতউল্লাহ ওমরজাই থেকে যান। তিনি একেবারে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন।
ওমরজাই ৩ চার ও ৫ ছক্কার ইনিংসে ৭৭ বলে ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন। নবীও২৭ বলে ৩৪ রান করে তার সঙ্গে থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। টাইগারদের পক্ষে অভিষেক হওয়া নাহিদ ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন, দুই উইকেট পান মোস্তাফিজও।