
চলতি মাস থেকেই ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের’ পুরো ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হয়ে যশোর-খুলনা রেলপথে যাতায়াতে দূরত্ব কমবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টার মতো এবং যশোর-বেনাপোল রেলপথে ৪ ঘন্টার মতো। প্রতিটি সেকশনে পথ কমবে প্রায় অর্ধেকের বেশি। ফলে এই পথের এক এক জোড়া ট্রেনকে দুইবার চালানোর কথাও ভাবছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
গত বছরের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা থেকে প্রথম বাণিজ্যিক আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। সে সময় পুরো প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে উদ্বোধন করা হয় মাত্র ৮২ কিলোমিটার। ভাঙ্গা জংশন স্টেশন থেকে মুকসুদপুর, লোহাগড়া, নড়াইল হয়ে প্রকল্পের বাকি ৯০ কিলোমিটার রেলপথ ইতিমধ্যে প্রস্তুত। ফলে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ রেলপথে আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে ট্রেন চালাতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। যদিও প্রকল্পটিতে লুপ লাইন ও সাইড লাইন রয়েছে ৪৩ দশমিক ২ কিলোমিটার। ফলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ২১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার।
প্রকল্পের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু, ভাঙ্গা, রাজাবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর হয়ে খুলনার দূরত্ব ৪১২ কিলোমিটার। কিন্তু নড়াইল হয়ে যশোরের পদ্মবিলা জংশন রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত প্রকল্পের রেলপথটি ১৭২ কিলোমিটার। ফলে এই পথে খুলনা যেতে দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ২৪০ কিলোমিটার। যা সময়ের হিসেবে সাড়ে ৩ ঘন্টা কম লাগবে। বর্তমান পথে ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৭ ঘন্টা ৩৫ মিনিট। প্রকল্পের রেলপথ দিয়ে ট্রেনটি ৪ ঘন্টার মধ্যে খুলনা পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বর্তমান রুটে বেনাপোলগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩৬৫ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতেও সময় লাগে ৭ ঘন্টা ৩৫ মিনিট। প্রকল্পের পথ দিয়ে যশোর হয়ে বেনাপোল যেতে ট্রেনটিকে পাড়ি দিতে হবে ১৯৩ কিলোমিটার পথ। ফলে এই পথে ট্রেনটির বেনাপোল যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টা। সময় সাশ্রয় হবে ৪ ঘন্টা।
প্রকল্পের রেলপথটি ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির ব্রডগেজ লাইন। যদিও ঢাকা থেকে পদ্মবিলা জংশন রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার পর প্রকল্পের একটি শাখা লাইন যশোরের রূপদিয়া এবং অন্য একটি শাখা লাইন খুলনার সিঙ্গিয়া স্টেশনে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে খুলনার ট্রেনগুলো পদ্মবিলা থেকে সিঙ্গিয়া হয়ে খুলনা স্টেশনে যাবে। যদিও পদ্মবিলা থেকে রূপদিয়া হয়ে যশোরের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “পুরো প্রকল্পে ভাঙ্গা স্টেশনে সিগনালিংয়ের কাজ এখনও চলছে। এটি এই সপ্তাহেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই মাসেই। আমরা আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে একটি তারিখ নির্ধারণ করেছি।”