
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টার ঘটনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার পর আজ নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে ব্যারিকেড ছাড়াও আজ কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে সশস্ত্র অবস্থায় মোতায়েন দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক এপিবিএন, বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। প্রস্তুত রাখা হয়েছে এপিসি, জলকামানসহ রায়টকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা বা আন্দোলনকারীদের কাউকে না দেখা গেলেও নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি ছিল স্পষ্ট। গতকালের ঘটনার পর আজ গণমাধ্যমকর্মীদের বাড়তি উপস্থিতিও দেখা গেছে।
বঙ্গভবন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলী গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল রাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ওপরে হামলা হয়েছে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত আছেন। এক শিক্ষার্থীসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আহত হয়েছেন তিনজন।

তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে আজ বঙ্গভবন এলাকায় নিরাপত্তা আরও বেশি জোরদার করা হয়েছে। যদিও আজ এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারী বা বিক্ষুব্ধ জনতাকে দেখা যায়নি। তবে আমরা সতর্ক আছি, পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছেন এপিবিএন, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী আজ বঙ্গভবন এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে সোমবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে তিনি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-জনতার গণজমায়েতের ডাক দেন।

সম্প্রতি মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘(পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার) বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়ত সময় পাননি।’
এরপর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সরকার পতনে নেতৃত্বদানকারীরা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষুব্ধ জনতা বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নেন। বিক্ষোভ করেন, স্লোগান দেন রাষ্ট্রপতি পদত্যাগের দাবিতে।
রাত ৮টা পর্যন্ত পরিস্থিতির স্বাভাবিকই ছিল। তবে এরপর আন্দোলনরতদের মধ্য থেকে এক দল অতি উৎসাহী বারবার বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন তারা। সেনাবাহিনী ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থানের ফলে তারা কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেনি।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিক থেকে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিক্ষোভকারীরা ভুয়া-ভুয়াসহ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এ ঘটনায় বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থীসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া একজন সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়। গুলিবিদ্ধরা হলেন– ফয়সাল আহম্মেদ বিশাল ও শফিকুল ইসলাম (৪৫)। সাউন্ড গ্রেনেডে আহত তরুণের নাম আরিফ (২০)।