পটুয়াখালীর বাউফলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (০৯ অক্টোবর) বাউফল উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি বাউফল উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, মহাগ্রন্থ আল কোরআন শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, পুরো মানব জাতির জন্য রচিত হয়েছে। যেখানে ড. শফিকুল ইসলাম মাসু, প্রতিবেশীর কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেশী মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টানসহ যে কোনো জাতি-গোষ্ঠী প্রতিবেশী রয়েছে তাদের হক নষ্ট না করার কঠোরভাবে নির্দেশনা রয়েছে কোরআনে। এই কোরআনই কেবল শান্তির কথা বলে, শান্তি বজায় রাখে। সমাজে কোরআনের বিধান কায়েম হলে ধর্মের বৈষম্য থাকবে না।
বাউফল পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবু অধির চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পটুয়াখালী জেলা আমির অধ্যাপক শাহ আলম, বাউফল উপজেলা আমির মাওলানা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জিতেন্দ্র নাথ, অতুল চন্দ্র পাল প্রমুখ নেতা।
ড. মাসুদ বলেন, যারা মসজিদে যেতে বাধা দিয়েছে, মসজিদে তালা মেরেছে, মসজিদের ভিতরে মানুষকে রক্তাক্ত করেছে, তারাই মন্দির ভেঙেছে, মন্দির লুটপাট করেছে, হিন্দুদের দোকান দখল নিয়েছে, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে নিজের তৈরি দালাল মিডিয়ার মাধ্যমে সে দায় চাপিয়ে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থিদের ওপর। অথচ জামায়াতে ইসলামী বারবার প্রমাণ দিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেশের, সমাজের সব মানুষ নিরাপদ এবং সব মানুষ নাগরিকের মর্যাদার অধিকারী। কেউ সংখ্যালঘু নয়।
মুসলমানরা যদি তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে ভিন্ন ধর্মের সঙ্গে মতবিনিময় করে সহযোগিতা চাইতে না হয়, তাহলে হিন্দু ধর্মের মানুষ কেন তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে মুসলমানদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চাইতে হবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তারমানে কিছু ঘাপলা আছে! জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব পেলে এসব ঘাপলা বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলা হবে। সমাজে হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের লোকজন পরস্পর ভাই-ভাই, ভাই-বোন হিসেবে শান্তিতে বসবাস করবে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগ হিন্দুদের সংখ্যালঘু উপাধি দিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কেউ সংখ্যালঘু নয় সবাই জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। সবার মর্যাদা ও অধিকার সমান। যে দল আমাদের নাগরিক হিসেবে সম্মান দেখিয়েছে। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে আমরা সেই দলের পক্ষ থাকব। কেউ কেউ অতীতে প্রচার করেছে আমরা নিদিষ্ট একটি দলের; কিন্তু না, যারা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে আমরা তাদের দলের নই।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনকালের চেয়ে গত দুই মাসে বেশি ভালো ও নিরাপদে হিন্দু সম্প্রদায় রয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, ০৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাউফলসহ সারা দেশেই হিন্দুদের ওপর হামলা ও লুটপাটের চক্রান্ত করা হয়েছে। সে চক্রান্তের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা ছিল। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী সবার আগে হিন্দুদের নিরাপত্তায় তাদের বাড়িঘর, মন্দির পাহারা দিয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য দলও তাদের মনোভাব পরিবর্তন করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দেশ উল্লেখ করে তারা বলেন, কোনো অপপ্রচারে হিন্দু সমাজ আর বিভ্রান্ত হবে না।