
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেছেন, ‘আমরা যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলি সে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক আইনের শাসন দরকার। শুধু আইনের শাসন হলে হবে না। আইনের শাসনের কথা বলে আগে র্যাবের শাসন ছিল এখন সেটা মবের শাসনে রূপান্তরিত হয়েছে। দুইটার উদ্দেশ্য কিন্তু এক। জনগণের মুখটাকে বন্ধ করে রাখা।’
তিনি সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে এসব কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, ‘কেন জনগণের মুখটা বন্ধ করে রাখার প্রয়োজন হয়? অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু কথা বলতে চেয়ে মানুষ তো প্রশ্ন করতে শুরু করেছে। যে কাজ করেছিল গত ১৫ বছর তা যদি অন্যায় হয় তা যদি অগণতান্ত্রিক হয় সেই কাজ করলে এখন কি তা গণতান্ত্রিক হবে?
এই প্রশ্ন তো মানুষ করতে চাইবে। মানুষ তো এটাও করতে চাইবে, লুটপাট দুর্নীতি করা যদি অবৈধ হয় এবং তার বিরুদ্ধে মানুষ যদি ক্ষুব্ধ হয় আর এখন যদি লুটপাটের খবর শুনি তাহলে মানুষ কি ক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার রাখে না।
কিংবা যদি নির্বাচনটাকে নিজের মতো করে নেওয়ার কারণে আগের সরকারকে আমরা অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট বলি এখন যদি নিজের মতো করে নির্বাচন করে নেওয়ার কেউ পরিকল্পনা করে, তাহলে সে-ও কি একই দোষে দুষ্ট হবে না। ফলে এই প্রশ্নগুলোই কিন্তু গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি। এটার মধ্যে দিয়ে কিন্তু শাসকগোষ্ঠী সব সময় সে প্রশ্নের মধ্যে থাকে বলে সতর্ক থাকে সচেতন থাকে।’
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘চমস্কির একটা গবেষণামূলক লেখায় আছে, যে কিভাবে কখনো কখনো ক্ষমতায় থেকেও আপাত-শৃঙ্খলাকেও পরিকল্পিত শৃঙ্খলতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তা আমরা সেটাই দেখি। মব কালচার হতো না এত দিন পর্যন্ত। চলত না এত দিন পর্যন্ত যদি রাষ্ট্র এখানে ভূমিকাটা পালন করত।
তাহলে কি এটা বুঝতে হবে যে রাষ্ট্র কখনো কেন প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে? রাষ্ট্র কেন ভূমিকা নিচ্ছে না? ভয়ে নাকি তারা চাইছে এরকম একটা হোক? ভয়ের চাইতেও বড় কথা হচ্ছে যে, এইরকম একটা অরাজকতা থাকাটা কারো কারো জন্য লাভজনক? যেমন নির্বাচন হতে পারে?
ফলে নির্বাচনটাকে যারা প্রলম্বিত করতে চান, দীর্ঘায়িত করতে চান বা দীর্ঘদিন পরে করতে চান তাদের জন্য এটা একটা জিনিস তৈরি হবে। তার মানে যারা নির্বাচন দীর্ঘায়িত করতে চায় তাদের সাথে সরকারের অবস্থানের মিল আছে। একটা মিল আছে।
দ্বিতীয় আরেকটা আছে, যেটা শামীম ভাই খুব দারুণভাবে বলেছেন যে কখনো কখনো অতীতের শাসনের লেজিটিমেসি দেওয়ার জন্য এ রকম হতে পারে যে তাহলে আগে আর কী খারাপ ছিল? এখন অনেকে সমালোচনা করলেই তো ফ্যাসিস্টের দোসর বলে। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করলেই বলবেন যে আপনারা তো হচ্ছেন আবার ফ্যাসিস্টের দোসর। কিন্তু এই কাজগুলো করার মধ্য দিয়ে কিন্তু আল্টিমেটলি কি হয়?
আলটিমেটলি এটাই হয় যে ১৪ সালে যে রকম নির্বাচন হয়েছে এবারও কি তাই হবে? আচ্ছা কেউ যদি বলে ৪০০টা সিটের মধ্যে ৩০০টাই তারা পাবেন যারা এখন দলটা রেজিস্ট্রেশনই করেন নাই তারাও যদি এটা বলেন তখন তার যদি সমালোচনা করেন আর তার কারণে যদি আপনার বিরুদ্ধে মব থাকে তাহলে আপনি দুটো কাজ করবেন প্রথমত ভয় পেয়ে চুপ করে থাকবেন অথবা আপনিও কোনো না কোনোভাবে মবকে জাস্টিফাই করতে গিয়ে গণতন্ত্রের যে প্রাণসত্তা সেটাকে ধ্বংস করবেন।
মুভমেন্ট মব আর মুভমেন্টকে আমরা গুলিয়ে ফেলছি। এবং মবকে আমরা ও মুভমেন্টের অধিকারী হিসেবে দেখছি। তাতে করে হয় কি মুভমেন্টের যে নৈতিকতা থাকে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে দেখুন সেই দিন পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়াতে যে ছেলেটা ভয় পায়নি। আজকে সে টাকার প্যাকেটের কাছে মাথা নত করছে অথবা এমন এমন খবর বেরিয়ে আসছে যে খবরটা দেখলে মনে হবে যে এই ছেলেমেয়েরাই তারা না জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল তাহলে আজকে কেন তারা এই পথে পা বাড়াল, তাহলে এগুলোকেও বিবেচনা আমাদের করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, যদি একটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি আমাদের গড়ে তুলতে হয় তাহলে মব সংস্কৃতির বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে।’