থাইল্যান্ডে বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন। সম্ভাব্য এই বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশ এখন ভারতের ইতিবাচক সাড়ার অপেক্ষায় আছে বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিমসটেক সামিটে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের জন্য আমরা প্রস্তুত। এখন দিল্লির ইতিবাচক সাড়ার অপেক্ষায় আছি।’
এবারের বিমসটেক সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়া অন্যদের জন্য একটি বার্তা উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন।
তিনি বলেন, “এই সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা সই হবে। যার মধ্যে অন্যতম মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, গণমাধ্যম, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও স্বাস্থ্য খাত। এছাড়া, স্থান পাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তিস্তা প্রকল্প ইস্যু।”
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকালে দেশটির সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বিষয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া, দুই দেশের নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা উঠতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, “চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। আমি মনে করি, চীনকে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে আমরা ধারণ করি, চীনও আমাদের ধারণ করে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব জানান, চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কোনো এজেন্ডাভিত্তিক নয়, নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তা ইস্যু উঠতে পারে।
“চীন সফরে রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমার ইস্যুতে চীনের ভিউ আমরা নেবো।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “চীনের সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বেড়েছে। কুনমিংয়ে বাংলাদেশিদের জন্য চারটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়েছে। বাংলাদেশেও তারা একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করবে।”
পররাষ্ট্র সচিব জানান, পরের দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে বলে এই সম্মেলনকেও আলাদা করে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।
বিমসটেকে ভারতের সরকারপ্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হবে কি-না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশ বৈঠকের জন্য প্রস্তুত আছে। ভারত থেকে ইতিবাচক সাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আগে আগামী ৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা বিমসটেক ইয়াং জেনারেশন ফোরামে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন।
সচিব বলেন, “আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ বিমসটেক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় করবেন এবং বিমসটেক অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ এই অঞ্চলকে আর্থ-সামাজিকভাবে আরও উন্নত, টেকসই ও শান্তিপূর্ণ হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবেন। বিমসটেকের আওতায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, যোগাযোগ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, জ্বালানি সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা ও মানব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, সংস্কৃতি, পর্যটনের বিকাশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনাপূর্বক শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণ সর্বসম্মতিক্রমে যৌথ ঘোষণা জারি করবেন। ”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এবারের সম্মেলন বাংলাদেশ এবং অন্যান্য বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় এবং গভীর করবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
বৈঠকে যোগ দিতে আগামী ৩ এপ্রিল ব্যাংকক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সম্মেলন শেষ করে ৪ এপ্রিল ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে তাঁর।
আগামী ২ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।
