
মামলা করতে আসা বাদীকে মারধর ও মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারে ঘুষ দাবির অভিযোগে রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে ডিআইজি প্রশাসন কাজী ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে রংপুর থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অপরাধ) হাবিবুর রহমান।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেত্রী লিপি খান ভরসার নাম বাদ দিতে ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও থানায় মামলা করতে আসা পলাশ হাসান নামে এক বাদীকে মারধর ও কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে ওই ব্যক্তিকে গুলি করতে উদ্যত হওয়ার অভিযোগে একটি অভ্যন্তরীণ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের হেডকোর্য়াটার্সে প্রতিবেদনও জমা পড়ে তার কর্মস্থল আরপিএমপি থেকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত বছরের ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর মামলা থেকে নাম কাটাতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার শিবলী কায়সারের নামে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির করেন ব্যবসায়ী অমিত বণিক। ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিওসহ থানায় জমা দেন লিপি খান ভরসা। এরপরেই বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। পরে বিকেল ৪টার দিকে লিপি খানের পক্ষে থানায় মামলা করতে যান তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার পলাশ হাসান (২৭)। বিকেল ৫টার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার। এসময় তিনি লিপি খান ভরসার ম্যানেজার পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন। তখন থানায় আরেক উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারে ঘুষ দাবির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরপরই এক সময়ের আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ও আওয়ামী লীগের নেত্রী লিপি খান ভরসাকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে হামলার অভিযোগে করা মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও লিপি খান ভরসাকে গ্রেফতার না করে বরং তার সাজানো ঘটনায় আরপিএমপির উপপুলিশ কমিশনার অপরাধ থেকে শিবলী কায়সারকে সরিয়ে দেওয়ার নিন্দা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের কয়েকজন লিপি খান ভরসার ছবি দিয়ে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন তারা। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ নিয়েও রংপুরে সমালোচনা তৈরি হয়।
এ ব্যাপারে আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার ( প্রশাসন ও অপরাধ) হাবিবুর রহমান জানান, থানায় বাদীকে মারধর, গুলির চেষ্টার বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে জানানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে শনিবার তাকে রংপুর থেকে প্রত্যাহার করে হেডকোয়ার্টার্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।