
নির্মাণাধীন ভবনের ঢালাইয়ের ওপর পা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ধোলাইখালে হামলার শিকার হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন আরও সাত শিক্ষার্থী। ওয়ারী থানার ৩৮ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সহিদ ও ধোলাইখাল এলাকার স্থানীয় লোকজন হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম নাহিদ ইসলাম সম্রাট। তিনি জবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের ছাত্র।
সোমবার রাত ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকার টিপু সুলতান সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম সম্রাট ও জাহিদ হাসান জিম, একই বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক হোসেন রাতুল ও আল মামুন, ইতিহাস বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ ও আবু সাঈদ মো. আকিব।
হামলায় আহত তিন শিক্ষার্থীকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা হলেন ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক। সিদ্দিককের পায়ে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়। এক্সরে সম্পন্ন করে প্লাস্টার করা হয়। আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকাশের মাথায় হামলাকালীন সময়ে গরম পানি ফেলা হয়। তার মুখ ও মাথা গরম পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবু সাঈদ মো. আকিবের পায়ে কাঁচবিদ্ধ হয়। পা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।
হামলায় আহত বাকি পাঁচ শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম সম্রাট ও জাহিদ হাসান জিম, ইশতিয়াক হোসেন রাতুল ও আল মামুন, হাবিবুর রহমানকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালের ৯নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
হামলার ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সম্রাট ধোলাইখাল এলাকার একটি মার্কেটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে নির্মাণাধীন ভবনের ঢালাইয়ের ওপর পা রাখেন। এতে স্থানীয় কয়েকজন তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে তাকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করতে তার রুমমেট হাবিবসহ আরও একজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন উল্টো তাদেরও আটক রেখে মারধর করেন। পরে আহত অবস্থায় সম্রাটকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম শহিদুল হক সহিদ, যিনি নবাবপুর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ৩৮ নং ওয়ার্ড, বিএনপি, ওয়ারী থানার সাধারণ সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার খবর চারোদিকে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে রাত বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হন। একপর্যায়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতা শহিদুল হক সহিদের নবাবপুরের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এসময় স্থানীয় একটি ক্লাবে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে রাত ১টার দিকে ওয়ারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। স্থানীয় ওই নেতার বাড়ি নবাবপুর রোড়ের টিপু সুলতান সড়কের লালচাঁন মকিম লেনে। শিক্ষার্থীরা নেতার বাড়িতে প্রবেশ করতে দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালায়। এসময় পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের মাধ্যমে বাড়িটি নিরাপত্তা দিতে ঘেরাও করে রাখা হয়।
এদিকে, ঘটনার পরপরই পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে আসে এবং অভিযুক্ত শহিদুল হক সহিদকে বের করে নেওয়ার চেষ্টা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।