
চলতি মাসেই চতুর্থ বছরে পদার্পণ করবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি তা রক্ষা করতে পারেননি। এখন যুদ্ধ বন্ধে উভয়পক্ষকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে তাঁর এই পদক্ষেপ নিয়ে ভয়ে আছেন ইউক্রেনীয়রা। তাদের ধারণা, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে পরিপূর্ণ হবে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়া অঞ্চল ফিরে পাওয়ার আশাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। খবর সিএনএন ও আলজাজিরার।
চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিনি যে শান্তি আলোচনা করতে চান, সেখানে ইউক্রেনের দখলকৃত জমির বেশির ভাগ অংশ ফিরে পাওয়ার বিষয়টি অসম্ভব। গত বুধবার পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিটের ফোনালাপের পর ট্রাম্পের এই মন্তব্য ইউক্রেনজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। দেশটির খুব কম মানুষই বিশ্বাস করেন, পুতিন সৎ বিশ্বাসে আলোচনা করবেন।
ইউক্রেনীয় প্রিজম নামে একটি থিঙ্কট্যাঙ্কের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ইউলিয়া কাজডোবিনা বিশ্বাস করেন না যে, রুশ নেতা শান্তি চান। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে রুশ পক্ষের সঙ্গে অনেক বছর ধরে আলোচনা করেছি।
রাশিয়ার ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তি লঙ্ঘন করার ইতিহাস রয়েছে কয়েক দশক ধরে। ১৯৯৪ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যারান্টির বিনিময়ে তার পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতে সম্মত হয়েছিল। সেখানে প্রতিশ্রুতি ছিল, তারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করবে। তবে ২০১৪ সালে অবৈধভাবে ক্রিমিয়াকে দখল এবং পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার পর মস্কো একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু সেই চুক্তিও তারা বারবার লঙ্ঘন করেছে। এর পর ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করে।
কাজডোবিনা বলেন, আমরা জানি রাশিয়া খুবই দ্বিচারী। যখন ছাড় দেওয়া এবং শান্তি স্থাপনের কথা আসে, তখন তারা বেঁকে বসে। তারা কোনো ছাড় দেয় না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্প-পুতিনের আহ্বানের জবাবে বলেছেন, কিয়েভের সম্পৃক্ততা ছাড়া তাঁর দেশ আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়া শান্তি চুক্তি মেনে নেবে না। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা আমাদের ছাড়া কোনো চুক্তি মেনে নিতে পারি না। আমাদের ছাড়া ইউক্রেনের বিষয়ে কোনো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা মেনে নেব না।
রুশ বাহিনী বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে আছে। তিন বছর আগে বিনা উস্কানিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার আগে তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল প্রায় ৭ শতাংশ। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ৬০ লাখ মানুষ, রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলে বাস করছে। সেখানকার ‘মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি’ হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা শিগগির সৌদি আরবে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ও হোয়াইট হাউসের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সৌদি আরব সফর করবেন বলে মার্কিন প্রতিনিধি মাইকেল ম্যাককল রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে জরুরি সম্মেলনে বসতে যাচ্ছেন ইউরোপের নেতারা। এ যুদ্ধ অবসানে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ওই আলোচনায় ইউরোপকে যুক্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত কেইথ কেলগ। এ নিয়ে উদ্বেগ থেকে ইউরোপের দেশগুলো জরুরি ওই সম্মেলনের আয়োজন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় জেলেনস্কি ‘ইউরোপের সেনাবাহিনী’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে পুরোনো সম্পর্ক ‘শেষ’ হয়ে যাচ্ছে এবং মহাদেশটিকে এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।