
তিন বছর পরপর সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ করতে হবে। পাশাপাশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছেও তা প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাবও। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এমন ৯ দফা সুপারিশ করা হচ্ছে। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সুপারিশের অংশ হিসেবে বিচারকদের বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণে অভিযোগ বক্স স্থাপনের পাশাপাশি থাকবে ডেডিকেটেড ইমেইল। বিচার বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কমিশন কথা বলেছে।
বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমের কাছে কমিশন সূত্র জানায়, আগামীকাল দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিচার বিভাগের কার্যক্রম আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে ৩২ বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হচ্ছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।
গণমাধ্যমটির প্রতিনিধি এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য, সাবেক জেলা জজ মাসদার হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন দাখিল করব।
সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে লিখিতভাবে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অভিযোগ বক্স স্থাপন করতে হবে। জনসাধারণ যাতে ইমেইলের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন এ জন্য একটি ডেডিকেটেড ইমেইল অ্যাড্রেস থাকবে।
অধস্তন আদালতে কর্মরত বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি তিন মাস পরপর দাখিল হওয়া অভিযোগসমূহ যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেবে এ কমিটি। কমিটিতে অভিযোগ দিতেও একইভাবে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বক্স স্থাপন ও ডেডিকেটেড ইমেইল অ্যাড্রেস উন্মুক্ত করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রত্যেক জেলায় জেলা জজের অধীনে একজন অতিরিক্ত জেলা জজ, একজন যুগ্ম জেলা জজ ও একজন সিনিয়র সহকারী জজের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে হবে। একইভাবে প্রতিটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একজন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কমিটি ‘দুর্নীতি অনুসন্ধান ও প্রতিরোধ কমিটি’ নামে অভিহিত করা যেতে পারে। আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দাখিল করা সব অভিযোগ ওই কমিটি পর্যালোচনা করবে এবং অভিযুক্ত কর্মকতা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে। এ কমিটিকে তিন মাস পর পর হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির কাছে তাদের কাজের বিবরণ সংবলিত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে হবে।
আইনজীবীরা দুর্নীতি প্রতিরোধে বার কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় পৃথক পৃথক অভিযোগ গ্রহণ ও তা নিষ্পত্তির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করার সুপারিশও করেছে সংস্কার কমিশন।
তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন