
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একাডেমিক ও গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে এগিয়ে নেয়ার আহবান জানিয়েছেন চীনে সফররত পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসআইআইএস)-এ এক সেমিনারে প্রধান বক্তৃতা করেন সফররত পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন।
উপদেষ্টা মি. তৌহিদ বলেন, “শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য আমাদের শেয়ার্ড ভিশন” শীর্ষক সেমিনারে একটি নিরাপদ ও উন্নত বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ ও চীনের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে।

এসআইআইএস-এর প্রেসিডেন্ট ডঃ চেন ডংজিয়াও তার স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিক এবং বিকশিত অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চীনের উন্নয়ন সহায়তা এবং বিনিয়োগের রূপান্তরমূলক ভূমিকার ওপর জোর দেন যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তিনি ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য ব্যবধান সংকুচিত করার এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির গুরুত্বের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কাঠামোর দাবি করে এবং নিম্ন প্রতিনিধিত্বশীল গোষ্ঠী, বিশেষ করে যুব ও মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর অধিক জোর দেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অগ্রণী ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মতো বাংলাদেশের সফল সামাজিক উদ্যোগগুলি তুলে ধরেন, যা গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন করেছে এবং সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তুলেছে। যুব সমাজকে উন্নীত করার জন্য অনুরূপ রূপান্তরমূলক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
রোহিঙ্গা সংকটের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরির করতে হবে। সংঘাতের সমাধানে বাংলাদেশ ও চীন উভয়েরই আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, সরকারী কর্মকর্তা, তরুণ গবেষক, মিডিয়া প্রতিনিধি, এসিআইএস এর সিনিয়র নেতৃত্ব, এবং সাংহাই পররাষ্ট্র বিষয়ক অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ নাজমুল ইসলাম এবং এসআইআইএস-এর সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
এদিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংহাইয়ের উপকণ্ঠে একটি উচ্চ প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদন কারখানাও পরিদর্শন করেন যেখানে তিনি বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন লাইন প্রত্যক্ষ করেন। বাংলাদেশে এ ধরনের প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা বিবেচনা করার জন্য তিনি চীনা কোম্পানির প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া সাংহাইয়ের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আজ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে তারা উভয়েই ঢাকা ও সাংহাইয়ের মধ্যে ব্যবসায় থেকে ব্যবসা এবং জনগণের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ বছর অনুষ্ঠিতব্য ‘সাংহাই ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যাল’-এ অংশগ্রহণের জন্য ভারপ্রাপ্ত মেয়র বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানান।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় সাংহাই ফেডারেশন অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্সের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন। আলোচনার সময়, তারা বাংলাদেশে চীনা উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তর, বিশেষ করে চট্টগ্রামের চীনা এসইজেডে, চট্টগ্রাম ও সাংহাইয়ের মধ্যে বিমান যোগাযোগ স্থাপন এবং দুই চেম্বারের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করেন।