
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায় দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। সোমবার এই মামলার সাজা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক অনির্বান দাস।
বিচারক জানিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড ও সবচেয়ে কম শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এর আগে আদালতে ১২ মিনিটের শুনানি হয় এ দিন। বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয় রায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি ওইদিন আরজি করে গিয়ে চিকিৎসকের গলা টিপেছিলেন, তাকে যৌন নিগ্রহ করেছেন। তাকে হত্যা করেছেন।’
সঞ্জয়ের কাছে বিচারক জানতে চান, ‘আপনি কি কিছু বলতে চান?’
সঞ্জয় তখন বিচারককে বলে,‘আমি নির্দোষ। আমায় ফাঁসানো হচ্ছে। আইপিএস অফিসার যা বলেছে তাই করেছি। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা রয়েছে। আমি অপরাধ করলে তা ছিঁড়ে পড়ে যেত।’
বিচারক জানান, ‘আমার সামনে যে তথ্যপ্রমাণ রাখা হয়েছে এবং সিবিআই যা বলেছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট।’
তখন সঞ্জয় আবার বলেন, তিনি নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
বিচারক তখন জানান, ‘আপনার সব কথা শুনব। তবে আপনি দোষী, আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে। সোমবার সাজা জানিয়ে দেব।’
বিচারক এটাও জানান, এই অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ও সবচেয়ে কম সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
সিবিআই ঘটনাস্থলে সঞ্জয় ঘোষের প্রবেশ ও বের হওয়ার সিসিটিভি ছবি দিয়েছে। তারা সঞ্জয়ের মোবাইল টাওয়ার দেখিয়ে প্রমাণ করেছে, ঘটনার সময় সঞ্জয় ওখানে ছিল। ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার গায়ের আঁচড় সঞ্জয়ের নোখ থেকে এসেছে। ফরেনসিক রিপোর্টেও সঞ্জয়কে দায়ী করা হয়েছে। সিবিআই সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে নারী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর কলকাতা পুলিশ সিভিক ভল্যান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি ছিল, সঞ্জয়ই হত্যাকারী।
কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ ওঠে। দাবি করা হয়, পুলিশ পরিবারকে প্রথমে জানিয়েছিল- ওই নারী চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। সকাল সাড়ে নয়টায় মরদেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু পুলিশ মামলা করে রাত পৌনে ১২টার দিকে।
এরপর কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকে একটি মামলা শুরু করে।
শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। সাধারণ মানুষ তাতে সামিল হন। আরজি করের অধ্যক্ষ ও সুপারকে সরানো হয়। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সিবিআই অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করে। তিনি এখন জামিনে মুক্ত।
এরপর কলকাতায় রাতদখলের আন্দোলন হয়, আরজি করের ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে সাধারণ মানুষ পথে নামে। দিনের পর দিন আন্দোলন হয়। সিবিআই চার্জশিট পেশ করার পর বিচার শুরু হয়। সেই বিচার শুরুর ৬৮ দিন পর তার রায় দেওয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে রুদ্ধদ্বার আদালতে ৫০ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে।