
অনন্ত যাত্রায় পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। সোমবার রাত ১০ টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কীর্তিমান অভিনেতা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
শরীরে অক্সিজেন–স্বল্পতাসহ বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে ১৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বাংলার নবাব খ্যাত এ অভিনেতা।
গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর পান্থপথের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁর ফুসফুসের সমস্যা ধরা পড়ে। অক্সিজেনের সঙ্গে ইন্টারনাল ব্লিডিংও হচ্ছিল। সেই সঙ্গে প্লাটিলেটও কমে যায়।
উল্লেখ্য, প্রবীর মিত্র চাঁদপুর শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। বংশপরম্পরায় পুরনো ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। তাঁর পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। তিনি প্রথম জীবনে সেন্ট গ্রেগরি থেকে পোগজ স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজন্তা মিত্র ২০০০ সালে মারা গেছেন। তাঁর এক মেয়ে তিন ছেলে। ছোট ছেলে ২০১২ সালে ৭ই মে মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা।
‘তিতাস একটি নদীর নাম,জীবন তৃষ্ণা, সেয়ানা, জালিয়াত, ফরিয়াদ, রক্ত শপথ, চরিত্রহীন, জয় পরাজয়, ‘অঙ্গার, মিন্টু আমার নাম, ফকির মজনু শাহ, মধুমিতা, অশান্ত ঢেউ, অলংকার, অনুরাগ, প্রতিজ্ঞা, তরুলতা,গাঁয়ের ছেলে,পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
অভিনয়ের সঙ্গে খেলাধুলাতেও সাক্ষর রেখেছেন তিনি। ষাটের দশকে ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেটে ক্যাপ্টেন হিসেবে খেলেছেন প্রবীর মিত্র। একই সময় তিনি ফায়ার সার্ভিসের হয়ে ফার্স্ট ডিভিশন হকি খেলেছেন। এছাড়া কামাল স্পোর্টিংয়ের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবলও খেলেছেন গুণী এই অভিনেতা।
১৯৮২ সালে তিনি বড় ভাল লোক ছিল চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে আজীবন সম্মাননা বিভাগে তাঁকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।
পৃথিবীর মায়া ছাড়লেও প্রবীর মিত্র বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মাধ্যমে।