ইউরোপের দেশ ইতালিতে ধূমপানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আজ বছরের প্রথম দিন থেকেই দেশটিতে জারি করা হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞার পর মিলানের রাস্তায় বা জনাকীর্ণ স্থানে ধূমপান করলে গুনতে হবে জরিমানা। তবে এমন কঠিন বিধান নেতিবাচকভাবেই দেখছে দেশটির অধিকাংশ জনগণ।
বুধবার এক প্রতিবেদনে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মিলানে যারা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে, তাদের ৪০ থেকে ২৪০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
নতুন বিধান অনুসারে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কঠোর আইন কার্যকর হয়েছে। রাস্তাসহ সব পাবলিক স্পেসে এই আইন প্রযোজ্য হবে, তবে বিচ্ছিন্ন অর্থাৎ যে জায়গাগুলোতে ধূমপায়ীদের কাছ থেকে অন্য ব্যক্তিরা কমপক্ষে ১০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেন, যেখানে সেখানে ধূমপান করা যাবে।
এর আগে ২০২০ সালে সিটি কাউন্সিলে মিলানের বায়ু মানের অধ্যাদেশ পাস করা হয়েছিল, যেখানে ধূমপানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছিল। পরে ২০২১ সাল থেকে পার্ক, খেলার মাঠের পাশাপাশি বাস স্টপ ও ক্রীড়া স্থাপনাগুলোতে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্যে হলো- শহরের বাতাসের গুণমান উন্নত করা, নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষা, পাবলিক স্পেসে পরোক্ষ ধূমপান থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট থেকে শিশুদের রক্ষা করা।
তবে, এই আইনের সমালোচনা করে মরগান ইশাক (৪৬) নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, আমার মতে নতুন আইনটি বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। আমি বাড়ির ভেতরে, বয়স্ক ব্যক্তি বা শিশুর সামনে ধূমপান না করতে রাজি, তবে আমার জন্য বাইরে ধূমপান নিষিদ্ধ করা মানে একজন ব্যক্তির স্বাধীনতাকে সীমিত করা।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সিগারেট একজন ধূমপায়ী পুরুষের জীবন থেকে ১৭ মিনিট ও নারী ধূমপায়ীর জীবন থেকে ২২ মিনিট কেড়ে নেয়। অর্থাৎ প্রতিটি সিগারেট গড়ে একজন ধূমপায়ীর জীবন থেকে ২০ মিনিট সময় কেড়ে নেয়।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ধূমপানকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে ঘোষণা দিয়েছে। ডব্লিউএইচও’র তথ্য অনুযায়, প্রতি বছর ধূমপান ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগে বিশ্বে মৃত্যু হয় ৯৩ লাখ মানুষের। তাদের মধ্যে অন্তত ৮০ লাখ সরাসরি ধূমপায়ী। বাকি ১৩ লাখ সরাসরি ধূমপান না করলেও, ধূমপায়ীদের আশেপাশে থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত।
