দ্রুত নির্বাচন না হলে ষড়যন্ত্র বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ছিল দেশের জনগণের। দ্রুত নির্বাচন না হলে ষড়যন্ত্র বাড়বে, জনগণের মধ্যে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা দল।
অনুষ্ঠানে রিজভী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি অন্তর্বর্তী সরকার যা করবে তা শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা বারবার বলছি, এখন ডানে-বামে কোথাও গেলে আগের মতো ভয় লাগে না। কোনো মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে কি না, এটি আগে দেখতাম। এই যে ভীতির একটা পরিবেশ, এখান থেকে তো আমরা কিছুটা মুক্তি পেয়েছি।
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কার তো কোনো বিষয় না, এটি একটি ছোট্ট ঘটনা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে আদেশ দেবেন, সেটি যদি প্রশাসন না করে এটাই তো সংস্কার। এর চেয়ে বড় কোনো সংস্কার আর হয় না। অর্থাৎ ওই আদর্শ যদি আইনসংগত না হয়, ডিসি, এসপি, প্রশাসনিক লোক যদি সেই আদেশকে না বলে, এটাই সংস্কার। এখন যদি বিচারককে অবৈধ নির্দেশ দেন, অমুককে জেলে ঢোকান, অমুককে সাজা দিন। যদি বিচারক না বলে, এটাই তো সংস্কার, এর চেয়ে সংস্কার আর কী হতে পারে? আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যদি নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে একটা পরিবেশ তৈরি করুন। যে পরিবেশে বিচারকরা নির্বাহী বিভাগের অন্যায় আদেশকে না বলতে পারে। এই একটি শব্দের ভেতরেই শত সংস্কার বিদ্ধ আছে। যেটা শেখ হাসিনার আমলে সম্ভব হয়নি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, কোনো কোনো উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন নিয়ে এত তাড়া কীসের? এত তাড়া তো নেই। শেখ হাসিনা অনেক লম্বা করেছেন, ১৫ বছর লাগিয়েছেন। আপনারাও যদি তাদের সঙ্গে আরও অনেক বছর যোগ করতে চান তাহলে তো জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেবে, পার্থক্য কোথায়?
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন সবাইকে নিয়ে আপনারা কাজ করুন। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশ কিন্তু বসে নেই। তারা নানা ধরনের একটার পর একটা দাবার চাল দিতে থাকবে। এই দাবার চাল যদি কেউ বুঝতে না পারে তখন কিন্তু দেশের অনেক ক্ষতি হবে।
উপদেষ্টারা বড় বড় কথা বলছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সাড়ে চার মাসের মতো প্রায় সময় গেলো। প্রশাসনের অবস্থা এখনো ঠিক হয়নি। গেল কয়েকদিনে রাজধানীতে ৯ জনকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়েছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বেড়ে গেছে। তাহলে কি প্রশাসনের মধ্যে আপনারা আপনাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারছেন না।
তিনি বলেন, গুম কমিশনের কাছ থেকে তথ্য পাচ্ছি, অনেক গুমের সহযোগী ছিল ভারত। আজকে অনেক লোককে ভারত ছাড়ছে। এদের ব্যাপারে একটা তদন্ত হওয়া উচিত। এরা কি গুম ছিল ভারতে? তাহলে নিশ্চয়ই ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম সাইফুল ইসলাম হিরু, জাকির, সুমন এখনো আছে। এটাতো একটা বিরাট ঘটনা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যে গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল, প্রমাণ তো আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশে তিনি গুম হয়েছিলেন, তারপর তাকে পাওয়া গেলো ভারতে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও বিরোধী দল শূন্য করার ক্ষেত্রে ভারতের দায় নেই সেটা অস্বীকার করা যাবে না। কারণ তারা তাদের লোককে রক্ষা করতে গিয়ে অনেক কিছুই করেছে। সুতরাং শেখ হাসিনার অনেক গুমের সহযোগী হচ্ছেন ভারতের কর্তৃপক্ষ। এটাকে অস্বীকার করা যাবে না।