আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দুই দিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
এলাকাবাসী ও দলীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট ও বাবুরহাটে সংঘর্ষে জড়ান বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. ফারুক কবিরাজ এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জি এম শামীম। এতে শফিক রহমান রাঢ়ী, রাসেল রাঢ়ী, আবু ইউছুফ, তাহমিনা বেগম, লিটন রাঢ়ী, গণি রাঢ়ী, মিজান খান, কবির হোসেনসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে দলীয় কার্যালয়, দোকান, বসতবাড়ি ভাঙচুর ও দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা যৌথভাবে জরুরি সভা করেন। সভায় ওই ইউনিয়নের বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জি এম শামীম বলেন, ‘বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন ফারুক কবিরাজ। এতে আমি আপত্তি জানাই। এ নিয়ে আমার সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছে। দুই দিন ধরে হামলা চালিয়ে আমার দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাছ ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছেন তাঁরা। চারটি বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে।’
অন্যদিকে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবিরাজ বলেন, ‘আবু ইউছুফ নামের আমার এক সমর্থককে কুপিয়ে তাঁর কান কেটে ফেলেছেন শামীমের শ্বশুর শফিক রহমান রাঢ়ী। এতে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শামীমের নেতৃত্বে এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজি চলছে। তাঁর এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। শামীমের লোকজন অস্ত্র নিয়ে বাজারে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছেন। তাঁরা ইউনিয়ন বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন।’
এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপি জরুরি বৈঠক ডেকে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, কমিটিতে তিনিসহ সদস্যসচিব শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমেদসহ সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের জেলা কমিটির একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তিনি আরও বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতকাল রাত থেকে উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।