
গণমানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ। আজ শনিবার বাংলা একাডেমি প্রথম ও জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় ক্ষণজন্মা এই মহাত্মাকে।
এ দিন রাষ্ট্রের উপদেষ্টা, সচিব, বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তারাও এসেছিলেন কবিকে বিদায় জানাতে। ছিলেন সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও।
পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আজ রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমসহ অনেকেই। জানাজায় ইমামতি করেন কবির ভাই দুলাল আবদুল হাফিজ। জানাজা শেষে প্রয়াত হেলাল হাফিজের প্রতি বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে কবির পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাব, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পরে বাদ জোহর জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় দফা জানাজার পর তার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানে বিকাল ৪টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

অকৃতদার হেলাল হাফিজের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটছিল ঢাকার শাহবাগের সুপার হোম নামের এক হোস্টেলে। শুক্রবার দুপুরে বাথরুমে পড়ে গেলে তার মাথায় রক্তক্ষরণ হয়। পাশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রতিভাবান কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায়। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত বইটির মুদ্রণ হয়েছে ৩৩ বারেরও বেশি। লেখালেখির পাশাপাশি হেলাল হাফিজ দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশের পর জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন কবি।
দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সময় হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ উচ্চারিত হয় মিছিলে, স্লোগানে, কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে। ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।