
নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া’র জন্ম ও মৃত্যু দিবস স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রোকেয়া দিবস` পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
ওইদিন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
দিবসটির কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বক্তারা বেগম রোকেয়ার সংগ্রামী জীবনের স্মৃতিচারণা করেন। তাঁরা বলেন, বেগম রোকেয়া এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে অজ্ঞতা, বৈষম্য ও নিপীড়ন থাকবে না। কিন্তু এখনো বিভিন্ন কুসংস্কার ও অবরোধের বেড়াজালে নারীরা আটকে আছেন। মনে রাখতে হবে, অনেক বাধা আসবে, সব বাধা মোকাবিলা করে নারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে মানবাধিকার নেত্রী শীপা হাফিজা বলেন, রোকেয়া এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে সমাজে অজ্ঞতা থাকবে না, বৈষম্য ও নিপীড়ন থাকবে না। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সব শ্রেণির নারী-পুরুষ উভয়কে কাজ করতে হবে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখায় না, এ শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, রোকেয়া শুধু নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে নয়, বরং নারী আন্দোলনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নারীর অগ্রযাত্রাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। লেখালেখির মাধ্যমে তিনি এটা করেছেন। শুধু নারী আন্দোলন নয়, সমাজসংস্কারক হিসেবে দেশের অগ্রগতির লক্ষ্যে নারী-পুরুষকে মানসিক দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের চন্দন লাহিড়ী বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে রংপুরে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের কথা আসাটা অত্যন্ত দুঃখের। ১০০ বছরের বেশি সময় আগে নারীমুক্তির লক্ষ্যে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার অর্জন ও অগ্রগতি কতখানি হয়েছে, আমাদের তা ভেবে দেখতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘রোকেয়া নারী-পুরুষের বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছিলেন, সেটার উত্তরসূরি হিসেবে সেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাব। ১৪৫ বছর আগে নারী মানুষ হওয়ার জন্য আন্দোলন করত। এখন নারীকে মর্যাদা পাওয়ার জন্য ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সকল জায়গার নারীদের সমান সুযোগ দিতে হবে, তাদের সুযোগ তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন সমাপিকা হালদার। আলোচনা শেষে নৃত্য পরিবেশনা করেন মুক্তা ঠাকুর, মনুসংহিতা এবং সেতু ও তাঁর দল।
বেগম রোকেয়া ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে রংপুর জেলায় মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আর মাত্র ৫২ বছর বয়সে ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। তার জন্ম ও মৃত্যুর দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।