রাশিয়ার সাথে চলমান যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রয়টার্স জানিয়েছে, তিনি ইউক্রেনের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিদেশি সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবও পুনরায় উত্থাপন করেছেন। সোমবার জার্মানির বিরোধী নেতা ফ্রিডরিশ মের্জের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আলোচনার জন্য যোগাযোগ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বলেন, আমি বাইডেনের সঙ্গে শিগগিরই কথা বলতে চাই এবং ন্যাটোতে যোগদানের আমন্ত্রণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করব।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রাক্কালে কিয়েভের এই অবস্থান যুদ্ধ আলোচনায় ইউক্রেনের বাড়তি প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রোববার প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার আহ্বান জানান। তিনি যুদ্ধকে ‘উন্মত্ততা’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত এর সমাপ্তির পক্ষে জোর দেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন এই যুদ্ধের শেষ দেখতে চায়। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কূটনৈতিক সমাধান বেশি প্রাণ রক্ষা করতে পারবে, আর আমরা সেটাই চাই।’
তিনি জানান, ম্যাক্রোঁ ও ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান রেখা ‘স্থগিত’ রাখার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে। ২০২২ সালের আক্রমণের পর এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাত।
তবে জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাস্তবে যুদ্ধ বন্ধ করতে চান না। পুতিনকে বাধ্য করতে হবে। তিনি বলেন, আপনি তখনই শক্তি প্রয়োগ করতে পারবেন, যখন ইউক্রেন শক্তিশালী হবে। কূটনৈতিক আলোচনা শুরুর আগে যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তিশালী ইউক্রেনের প্রয়োজন।
ফেব্রুয়ারিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তখন ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে কোনো ঐকমত্য হয়নি।
জেলেনস্কি বলেন, ইমানুয়েলের অবস্থান নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। তিনি এমন কিছু সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব করেছেন, যা ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে পারে যতদিন না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে।তবে তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্ট জানতে হবে ইউক্রেন কখন ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেবে।
ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। জেলেনস্কি প্রশ্ন তুলেছেন, যদি কোনো বিরতি ঘটে, ইউক্রেন যদি তখনও ন্যাটোতে না থাকে, এমনকি আমন্ত্রণ থাকলেও যদি সদস্যপদ না মেলে, তবে আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
রাশিয়া বরাবরই ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের বিরোধিতা করে আসছে এবং একে নিজের নিরাপত্তার জন্য অগ্রহণযোগ্য হুমকি বলে মনে করে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং তার মতামতের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আর ট্রাম্পের সঙ্গে এমন কিছু নিয়ে আলোচনা করার কোনো মানে নেই, যা বর্তমানে তার হাতে নেই।