৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার মামলায় বোয়িং কোম্পানি যে আপসের প্রস্তাব দিয়েছিল, তা প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত। ওই দুই দুর্ঘটনায় মৃত ৩৪৬ যাত্রীর পরিবার আদালতের এই রায়ের প্রশংসা করেছেন।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, বোয়িং অপরাধ অস্বীকার করে স্বাধীন পর্যবেক্ষণের আওতায় যেতে রাজি হয়েছিল। সেই সঙ্গে ২৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার জরিমানা দিতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু আদালত মনে করছেন, সরকারের সঙ্গে বোয়িংয়ের এই আপস আদালতের এখতিয়ারের পরিপন্থী। ওই আপস রফায় ন্যায়বিচার এবং জনসাধারণের আস্থার ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। খবর বিবিসির
এ দুটি দুর্ঘটনার দায় বোয়িংকে এখনো পিছু ছাড়ছে না। সেই সঙ্গে কোম্পানির কর্মীরাও সম্প্রতি ধর্মঘট করেছেন। সব মিলিয়ে ভালো অবস্থায় নেই বোয়িং।
এদিকে মার্কিন বিচার বিভাগ বোয়িং–সংক্রান্ত এক সাম্প্রতিক ঘোষণা খতিয়ে দেখছে, যদিও বোয়িং এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি।
বিচারক বোয়িং কোম্পানি নিয়ে সরকারের পর্যবেক্ষণের সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, সরকারের পর্যবেক্ষণ অনেকাংশে অকার্যকর ছিল। তিনি মনে করছেন, সময় এসেছে, এখন জনস্বার্থে আদালতকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
বাস্তবতা হলো, যে স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের নিয়োগের কথা আপস প্রস্তাবে ছিল, সেই পর্যবেক্ষক নিয়োগে বোয়িং কোম্পানির মত দেওয়ার বিধান ছিল। আবার পর্যবেক্ষকদের মত আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও বোয়িংয়ের বাধ্যবাধকতার বিধান ছিল না আপস প্রস্তাবে।
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আইনজীবী বলেন, ২টি দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁদের আত্মীয়স্বজনের যে বেদনা, এই আপসের বন্দোবস্তে সে বিষয় প্রতিফলিত হয় না। আইনজীবীরা মনে করছেন, এই চুক্তি প্রতারণামূলক; জনস্বার্থের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।
বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের বিমানের প্রত্যয়নের সময় বোয়িং কর্তৃপক্ষ ফেডারেল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। ২০১৭ সালে এই মডেলের বিমান আকাশে ওড়ে। এরপর ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুটি দুর্ঘটনা হয়। এখানে বিমানের নিরাপত্তাব্যবস্থায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল এবং বোয়িং ফেডারেল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জালিয়াতি করেছিল।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও বোয়িং অপরাধের অভিযোগ ফয়সালা করার বিষয়ে একমত হয়। সেই সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রম পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বোয়িংকে তিন বছর সময় দেওয়া হয়; এই সময়ের মধ্যে তারা বিমানের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। কিন্তু সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই চলতি বছরের শুরুতে আলাস্কা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের প্যানেল খুলে পড়ে। এরপর আবার বোয়িংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।