ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, তিনি ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে’ ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করবেন। পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটকে কেন্দ্র করে মিশেল বার্নিয়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করার পর গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এমন অঙ্গীকার করেছেন মাখোঁ।
গত বুধবার পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা ভোটে বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের একটা বড় অংশ বার্নিয়েরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে ভোট দেন। এর পর বার্নিয়ের গতকাল প্রেসিডেন্ট মাখোঁর কাছে পদত্যাগপত্র দেন। দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মাথায় তিনি পদত্যাগ করলেন। বার্নিয়েরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, গত সোমবার দেশটির সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট নিয়ে বিশেষ ক্ষমতা খাটিয়েছিলেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ১০ মিনিটের ভাষণ দেন মাখোঁ। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বিরোধী দল তাঁকে যে চাপ দিচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। মাখোঁ বলেছেন, পূর্ণ মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর পদে থাকবেন।
২০২৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাখোঁর মেয়াদ শেষ হবে।
মাখোঁ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বল্প মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় বার্নিয়েরের ভূমিকার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মাখোঁ অভিযোগ করেন, কট্টর ডানপন্থী এবং কট্টর বামপন্থীরা সরকার পতনের জন্য ‘প্রজাতন্ত্র বিরোধী’ উদ্যোগ নিয়েছে।
কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) নেত্রী মেরিন লা পেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট মাখোঁ যাঁকে সংবিধানের গ্যারান্টর বলে মনে করা হয়, তাঁকে একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে সমালোচনা করাটা প্রজাতন্ত্র–বিরোধী নয়। এটা আমাদের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে উল্লেখ করা আছে।
বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) এবং লা পেনের আরএন দলের উদ্যোগে বার্নিয়েরের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। কোনো ভোটাভুটি ছাড়াই বিশেষ ক্ষমতাবলে বাজেট পাস করাতে চাওয়ায় বার্নিয়েরের প্রতি অনাস্থা ভোট হয়।
পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে ৩৩১ জন বার্নিয়েরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যা প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে অনেক বেশি। প্রস্তাবটি পাস করাতে ২৮৮টি ভোটের প্রয়োজন ছিল।
এমন অবস্থায় গতকাল বার্নিয়ের পদত্যাগ করেন। আর এর মধ্য দিয়ে বাজেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাহার হয়ে গেছে। তবে নতুন সরকার নিয়োগ না পাওয়া পর্যন্ত নিজের মন্ত্রীদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন বার্নিয়ের। তবে মাখোঁর ভূমিকার ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
মাত্র তিন মাস আগে বার্নিয়েরকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন মাখোঁ। গত জুলাইয়ে আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে আছেন মাখোঁ। দেশটির পার্লামেন্টের অচলাবস্থা এবং রাজনৈতিক সংকটের জন্য সমালোচনার মধ্যে আছেন তিনি।
মাখোঁ স্বীকার করেছেন, তিনি সিদ্ধান্তটি জেনেবুঝে নেননি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাকে এর জন্য অনেকে দোষারোপ করছেন এবং আমি জানি অনেকে এ দোষারোপ চালিয়ে যাবেন। এটা বাস্তবতা এবং এটা আমার দায়িত্ব।’
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সে ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দেননি মাখোঁ। তবে তিনি বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ামাত্রই নতুন প্রধানমন্ত্রীর কাজ হবে ২০২৫ সালের বাজেটের দিকে মনোনিবেশ করা।
কে নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকোর্নু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ু এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফ্রসোঁয়া বায়রু।