
স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত হাজারো নারীর জীবন বলি দিতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড়ো বাঁধা উন্মুক্ত আলোচনায় সংকোচ। এর কারন সমাজে এই বিষয়গুলো এখনো নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার নারী জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং অনেকেই প্রাণ হারান। তবে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সারগুলো শনাক্ত করা গেলে এবং কার্যকরী চিকিৎসা করা হলে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত স্ক্রিনিং, এবং টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার মাধ্যমে এই রোগগুলোর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
জরায়ু ক্যান্সারের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, মানব প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) সংক্রমণ, যা প্রধানত অসুরক্ষিত যৌন কার্যক্রমের মাধ্যমে ছড়ায়। অল্প বয়সে যৌনজীবন শুরু করা, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, এছাড়াও নারীদের দীর্ঘমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার, ধূমপান এবং যৌন স্বাস্থ্যবিধি না মানাও এর জন্য দায়ী।
পরিবারে যদি কারো স্তন ক্যান্সার থেকে থাকে (যেমন : মা, বোন, নানী) তাহলে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও, বেশি বয়স, মেনোপজ দেরিতে হওয়া, অথবা প্রথম সন্তান দেরিতে নেওয়ার মতো কারণও স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
অন্যদিকে, স্তন ক্যান্সারের কারণগুলোর মধ্যে জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব রয়েছে। পরিবারে যদি কারো স্তন ক্যান্সার থেকে থাকে (যেমন : মা, বোন, নানী) তাহলে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও, বেশি বয়স, মেনোপজ দেরিতে হওয়া, অথবা প্রথম সন্তান দেরিতে নেওয়ার মতো কারণও স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী। শারীরিক স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনে সচেতনতা। জরায়ু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অল্প বয়সে বিয়ের প্রভাব এড়ানো উচিত। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুরক্ষিত পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি। স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, পরিবারের পরিবারের ইতিহাস থাকলে বয়স ৩০ পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই নিয়মিত স্তন স্ক্রিনিং করানো উচিত। জীবনযাপনে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন, যেমন: সুষম খাদ্য গ্রহণ, ধূমপান ত্যাগ, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের টিকা গ্রহন(HPV vaccine), মাসিককালীন জরায়ুর পরিচ্ছন্নতার অধিক দিকে খেয়াল রাখা। মনে রাখা প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে এ রোগ গুলো কমিয়ে আনা সম্ভব।
আমাদের দেশে, বিশেষত গ্রামে এখনো নারীরা তাদের মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার করে থাকে। এটি জরায়ুর নানাবিধ রোগ বহনকারী হিসেবে কাজ করে। আবার, কাপড় ব্যবহারের পরবর্তী অসতর্কতা যেমন: যথাযথ ভাবে না শুকানো, কোনো এন্টিসেপ্টিক লিকুইড দিয়ে পরিষ্কার না করা, একই কাপড় বার বার ব্যবহার ইত্যাদি নানা কারনে এই মারণব্যধি আরো বেশি ছড়িয়ে পরছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, ডিজিটাল এই যুগে এসেও নারীরা কেনো মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করে কাপড় ব্যবহার করছে? এর প্রধান দুটি কারন হলো, লজ্জা আর দাম। এই সময়ে এসেও সমাজের মানুষ মাসিকের বিষয়টিকে চরম নিষিদ্ধ মনে করেন। এমন কি নারীরাও এটি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে লজ্জাবোধ করেন। একটা মেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে ফার্মেসীতে গেলে, বিক্রেতারা খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এবং এমনভাবে স্যানিট্যারি ন্যাপকিন কাগজে বা কালো পলিতে মুড়িয়ে দেয় যেনো নিশ্চিত কোনো অবৈধ কিছু!

অনেক নারী স্যানিটারি ন্যাপকিনের উচ্চমূল্যের কারণে এখনো কাপড় ব্যবহার করতে বাধ্য হন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় টিস্যু, যা আরো ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়।
আমাদের উচিত সমাজে আওয়াজ তোলা যাতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার আর কোন নারীর মৃত্যুর কারণ না হয়। যদি কোন মা বা বোনের স্তনে গুটি গুটি বা চাকা চাকা কিছু হয় কিংবা জরায়ুতে ব্যাথা হয়; অবহেলা না করে উচিত হবে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো। কেননা, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। তথ্য অনুযায়ী এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে নিয়মিত নিজেই স্তন পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের কাছে বার্ষিক চেকআপ করানো অত্যন্ত জরুরী। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এ রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া, গ্রাম ও শহরাঞ্চলে নারীদের জন্য সচেতনতা ক্যাম্প এবং বিনামূল্যে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব।
জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ এই রোগগুলোর ঝুঁকি কমিয়ে নারীদের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
লেখক : সাজিয়া ইসলাম পায়েল
প্রতিষ্ঠাতা, শেকড়
ইমেইল: saziaislam89@gmail.com