মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। মংডু আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে দুই পারেই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাঝুঁকি বেড়েছে। এমন আশঙ্কা থেকে বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
প্রসঙ্গত, গত রোববার দুপুরে মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সর্বশেষ ৫ নম্বর সীমান্ত ব্যাটালিয়নটিও দখলে নেয় তারা। ওদিকে রাখাইন রাজ্যে এখনও পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরোধ রয়েছে। তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে আরাকান আর্মি।
এদিকে মংডু দখলের পরপরই আরাকান আর্মি নাফ নদীতে নৌ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে বাংলাদেশে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট দিয়ে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত পাঁচ দিন ধরে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজ বা কার্গো ট্রলার বাংলাদেশে আসতে পারছে না। এতে সেন্ট মার্টিনে খাদ্যসামগ্রীর মজুত কমে গেছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের মংডুর সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। নাফ নদীটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা ভাগ করে রেখেছে। রাখাইন রাজ্যেটির বিপরীতে বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।
নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ-উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটারে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফ, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে নাফ নদীর বাংলাদেশ জলসীমানায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল তৎপরতা চোখে পড়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটি’র সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মংডু টাউন রাখাইন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় দুই পারের (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। রাজ্যটি শেষ পর্যন্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থেকে গেলে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন থেমে যাবে।
মিয়ানমারের কাউকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
আরআরআরসি দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।